কাউন্সিলর বিদ্রোহে যেভাবে নত হল আওয়ামী লীগ

দিনভর নানা নাটকীয়তা শেষে অনড় অবস্থানেই রইলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। একইভাবে আগের মতো কঠোর অবস্থানের কথাই আউড়ে গেল আওয়ামী লীগের নেতারাও। তবে চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহীদের বিষয়ে নেতাদের এসব কঠোর হুঁশিয়ারির বিপরীতে এসব প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তৎপরতা ছিল না একেবারেই। ফলে যা হবার তাই হলো। দিনশেষে একজন ছাড়া সকল আলোচিত বিদ্রোহী প্রার্থীই নিজেদের প্রার্থিতার সিদ্ধান্তে অটল থাকলেন।

বিদ্রোহী কাউন্সিলরদের বিষয়ে রোববার (৮ মার্চ) ওবায়দুল কাদের নিজে এসে সিদ্ধান্ত দেবেন গত ৫ মার্চ এমনটাই জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। শনিবার প্রথমে সেই বর্ধিত সভা স্থগিত করা হল। শেষ বেলায় জানানো হলো রোববার বিকেলে বিদ্রোহীদের নিয়ে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সকালে ওবায়দুল কাদের এসেই যা বললেন তাতে অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যায় নির্বাচনে বিদ্রোহীদের বিষয়ে যতটা বলা হচ্ছিল অতটা কট্টর আসলে নয় আওয়ামী লীগ। সকালে কর্ণফুলী টানেল ঘুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কাদের বলেন, ‘বিদ্রোহীদের নিয়ে এত কথা বলার কিছু নেই। ঢাকাতেও বিদ্রোহী ছিল। তাদের অনেকে জয়ীও হয়েছে। সরকার বরং নির্বাচনী পরিবেশ কারা নষ্ট করছে সে বিষয়ে নজর দেবে।’

এরপর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের নেতাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কাউন্সিলরদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেয়া হয় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে।

সভা শেষ করে বের হয়ে যাওয়ার পথে কাদের জানান, ‘সিদ্ধান্ত নেবেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রয়োজনে বাকিদের সাথে কথা বলে কাউন্সিলর মনোনয়ন পরিবর্তন, সংশোধন কিংবা পরিবর্ধনও করতে পারবেন তিনি।’

এরপর বিকেল ৪ টায় নগরীর কে সি দে রোডের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন ড. হাছান মাহমুদ। তবে বিদ্রোহীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আহবানও জানান তিনি। বলেন তা না করলে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তাদের।

তবে পরিবর্তন কিংবা সংশোধনের সম্ভাবনা নিয়ে আর কেউ কোন কথা বলেননি। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেনসহ সবাই বলছিলেন বটে প্রত্যাহার করার কথা, তবে সে সময়ে বেশিরভাগ বিদ্রোহী প্রার্থী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের বেলা যে পেরিয়ে যাচ্ছে, সে বিষয়ে নজর ছিল না কারোর।

দিনশেষে ফলাফলও মিললো হাতেনাতে। আলোচিত বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে একজন দিদারুল আলম মাসুম ছাড়া আর কোন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। বর্তমান ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রত্যেকেই অটল থেকেছেন নিজেদের সিদ্ধান্তে।

তবে এজন্য নেতাদের দুই রকমের কথাকেই দুষছেন তারা। বর্ধিত সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে কথা হয় ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের সাবের আহমদ সওদাগরের সাথে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘নেতারা একেকজন একেক রকমের কথা বলছেন। সকালে ওবায়দুল কাদের ভাই বললেন বিদ্রোহীদের নিয়ে সমস্যা নেই। আবার সারাদিন নেতারা বললেন প্রত্যাহার করতে হবে। এদিকে উনারা প্রত্যাহার করার সময়টা আমাদের নিয়ে বৈঠক করে কাটিয়ে দিলেন। আমি অবশ্য প্রত্যাহার করিনি। দেখি কী হয়!’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!