কাউন্সিলর প্রার্থীতে হিমশিম আ.লীগ

City-electionঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একক প্রার্থী সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের সংকট আপাতত কেটেছে। কিন্তু কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী সমর্থন নিয়ে দলটি পড়েছে বেকায়দায়। প্রতিটি ওয়ার্ডে দল-সমর্থিত ৫ থেকে ৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইচ্ছুক। এতে ক্ষমতাসীন দলটি একক প্রার্থী সমর্থন দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। একারণে একক প্রার্থী চূড়ান্তকরণ দলের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তবে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন অর্থ্যাৎ ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত ৫ ধরনের প্রার্থী ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে, দলের কেন্দ্রীয় ও নগর নেতাদের আর্শীবাদপুষ্ট, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সমর্থনপুষ্ট, ৭টি সহযোগী ও ২টি ভ্রাতৃ-সংগঠনসহ প্রায় প্রতিটি সংগঠনের নেতা-কর্মী, দলের সমর্থক হলেও সাংগঠিকভাবে নিষ্ক্রিয় কিন্তু এলাকায় প্রভাবশালী এবং শরিক দল-সমর্থিত প্রার্থী। আর এই ৫ ক্যাটাগরির প্রার্থী থেকে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন দলের ভেতর থেকেই উঠে আসছে।

প্রসঙ্গত, এককপ্রার্থী চূড়ান্ত করতে দলের সিনিয়র নেতাদের দিয়ে রাজধানীর নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-১০ ও ১৩ আসনের দায়িত্ব পেয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ঢাকা-৬, ৭, ১২ ও ১৮ আসনে সভাপতিম-লীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও সাহারা খাতুন, ঢাকা-১১ ও ১৭ আসনে দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা-৪, ৫, ৮ ও ৯ আসনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এবং ঢাকা-১৪, ১৫ ও ১৬ আসনে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। এসব নেতা দফায়-দফায় বৈঠক করছেন একক প্রার্থী সমর্থন চূড়ান্ত করতে।

এর বাইরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণে আবদুর রাজ্জাক এবং উত্তরে ফারুক খানকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। মহানগরের পক্ষ থেকে দক্ষিণে এম এ আজিজ ও কামরুল ইসলাম এবং উত্তরে মোফাজ্জল হোসেন ও রহমতউল্যাহকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের নেতা, সংসদ সদস্য বা সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের প্রার্থীদের পক্ষে দলীয় সমর্থন চূড়ান্ত করতে সব ধরনের চেষ্টা তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে। এককপ্রার্থী চূড়ান্ত করতে গঠিত কমিটির নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগোযাগ করে ও তাদের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে নিজ-নিজ প্রার্থীর যোগ্যতাসহ সাবিক গুণাগুণ তুলে ধরে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

কাউন্সিলর পদে ঢাকা উত্তরের ৩৬টি ওয়ার্ডে ৪৪৬ জন ও ঢাকা দক্ষিণের ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ৫৩৩ জন প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ হয়েছে। এছাড়া ঢাকা উত্তরের ১২টি সংরক্ষিত আসনে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ১১৩ জন ও দক্ষিণের ১৯টি সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে বৈধ প্রার্থীর সংখ্যা ২২ জন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৭ জনের মনোনয়নপত্র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ হয়েছে।

জানা গেছে, বৈধ কাউন্সিল প্রার্থীর প্রায় দুই তৃতীংশই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের শরিক দল-সমর্থিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মূল সংগঠনের বাইরে এর প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতারাও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমনকি ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের বর্তমান কমিটির নেতারাও নির্বাচনী যুদ্ধে যুক্ত হয়েছেন। ঢাকার দুটি ওয়ার্ডে বর্তমান কমিটির দুই নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদিকে ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরা সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সমর্থনের দৌড়ে যুক্ত না হলেও কাউন্সিলর পদে তারা সমর্থন পেতে আওয়ামী লীগের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। সম্প্রতি ১৪ দলের শরিকরা এক বৈঠক করে আওয়ামী লীগের কাছে তাদের প্রার্থীদের তালিকা তুলে দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, তারা ১ থেকে ৭/৮জনের মতো প্রার্থীর নাম দিয়েছেন জোটের পক্ষ থেকে সমর্থন পাওয়ার জন্য। সব মিলিয়ে অবস্থা যে পর্যায় গিয়ে ঠেকেছে, তাতে এককপ্রার্থী সমর্থন দেওয়ার প্রচেষ্টা সফলতা আসার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মনে করছেন দলের অনেকেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বৃহৎ দলের পক্ষে একক প্রার্থী সমর্থন দেওয়া কঠিন কাজ। তবে, আমরা কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী দেওয়ার সবোর্চ্চ চেষ্টা করছি। নগরের নেতা হোক, থানা-ওয়ার্ডের নেতা হোক বা সহযোগী সংগঠনের কেউ হোক- যার যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা অন্যদের চেয়ে ভালো, তাকেই আমরা সমর্থন দেব। দলের সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছে, উল্লেখ করে তিনি জানান, আমরা সব কিছু বাচ-বিচার করব। এতে যিনি ভালো হবেন তাকেই সমর্থন দেব।

মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, একক প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার কাজ চলছে। ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগেই একক কাউন্সিলর প্রার্থী দিতে পারব বলে আমরা আশা করছি।

এর আগে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য শেখ ফজলূল করিম সেলিম বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে ৮ থেকে ১০ জন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। একক প্রার্থীর সমর্থন নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল জানান, প্রতিটি সংরক্ষিত আসনে তাদের সংগঠনের ৩/৪জন করেও কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। মহিলা আওয়ামী লীগের সংখ্যাও প্রায় একই। তবে, উভয় সংগঠন থেকে পৃথকভাবে তারা একজন করে যোগ্য প্রার্থীর তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী যে কমিটি করে দিয়েছেন, তাদের কাছেও তারা লিস্ট দিয়েছেন। সব বিচার বিশ্লেষণের পরসংগঠনের যোগ্য যারা আছেন, তারা দলের সমর্থন পাবেন বলে জানান অপু উকিল।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে তাদেরই সব চেয়ে বেশি সংখ্যক নেতা-কর্মী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছে। এগুলো থেকে বাছাই করে তারা একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগের কাছে দেবে। তাদের সমর্থিত নেতারা যেন দলের সমর্থন পায়, এরজন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবেন বলে জানান ওই্ নেতা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!