কাউন্সিলর ডিউকের স্বাক্ষরে জন্মসনদ পায় রোহিঙ্গারা

জালিয়াতি ও মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ওয়ার্ড থেকে সনদ পায় রোহিঙ্গারা। এ সনদ পেতে রেফারেন্স হিসেবে সংগ্রহ করেছে ইউনিয়ন ও পৌরসভার জাতীয় সনদও। এসব সনদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার। এভাবে উপজেলার সনদের রেফারেন্সে সত্যায়ন করাসহ ওয়ার্ড থেকে জন্ম ও জাতীয় নাগরিক সনদ দেয় বেশিভাগ কাউন্সিলররা। শুধু তাই নয়, করপোরেশনের দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের স্থানীয় বানিয়ে করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটারও। এতে খুব সহজে রোহিঙ্গাদের হাতে চলে যায় জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)—দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তদন্ত কর্মকর্তা এসব তথ্য দিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনআইডি জালিয়াতি কাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক, ওয়ার্ড জন্ম নিবন্ধন সহকারী ফরিদুল আলমসহ সেখানকার সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড সচিব। এদের বিরুদ্ধে চিঠি ইস্যু করে তাদের তলব করবে দুদক।

জালিয়াতি করে এনআইডি পাওয়া রোহিঙ্গারা হলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার আমিলাইশ গ্রামের বাসিন্দা মো. বজল আহাম্মদের পুত্র মোহাম্মদ জোনাইদ। বর্তমানে তিনি নগরের ডবলমুরিং থানার ২৪ উত্তর আগ্রাবাদ আসকারাবাদ এলাকায় বসবাস করেন। অপরজন হলেন চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ফতেহপুর মিঠাছড়া গ্রামের মো. সেলিমের পুত্র সাবাকুন নাহার। বর্তমানে তিনি ডবলমুরিং থানার ২৪ উত্তর আগ্রাবাদ এলাকার কালা মিয়ার ভাড়া ঘরে বসবাস করেন।

জানতে চাইলে কাউন্সিলর নাজমুল হক ডিউক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এনআইডির ঘটনায় জালিয়াতি হলেও দুদক কেন, প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ বিষয়ে জবাবদিহি করব। জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই।’

দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলররা যাচাই-বাছাই না করে রোহিঙ্গাদের হাতে তুলে দিয়েছে এনআইডি। সাম্প্রতিক অভিযুক্ত বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরসহ সেখাকার জন্ম ও জাতীয় সনদ ইস্যুকারী দুই কর্মকর্তাকে চিঠি ইস্যুর মাধ্যমে তলবও করা হয়। তলবকালে রোহিঙ্গারা কিভাবে এনআইডি হাতে পায় এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদক কমিশন বরাবরে সুপারিশ করা হবে ।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেকে অর্থের বিনিময়ে পেয়ে যায় বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)। এই এনআইডি দিয়ে আবার অনেকে পাসপোর্টও তৈরি করে। এদের মধ্যে বড় অংশ বিদেশেও চলে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর একটি টিম তদন্ত শুরু করে। এতে প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে অধিকতর তদন্তের অনুমতি চেয়ে কমিশন বরাবরে এই ঘটনার প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক। ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমতি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!