কাউন্সিলরে ভোটের মাঠ খুলে দেওয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগের তৃণমূলও

চট্টগ্রাম সিটির ভোট

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন না পেয়ে নির্বাচন করা প্রার্থীদের দলীয় পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দিতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে সুপারিশ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে এক্ষেত্রে শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড বিদ্রোহীদের বিষয়ে যতটা কট্টর ছিল, এই মুহূর্তে ঠিক তেমনটা মনে হচ্ছে না। এদিকে নির্বাচনে ‘বিদ্রোহীদের’ অনেকেরই মাঠপর্যায়ে শক্ত অবস্থানের কথা উঠে আসছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও।

এর মধ্যেই প্রার্থীদের সতর্ক করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, আইন অনুযায়ী কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান নেই এবং প্রচার-প্রচারণায় দলীয় মনোনয়নের কথা ব্যবহার করা যাবে না। এর মধ্যে যেসব প্রার্থী নিজেদের পোস্টার ব্যানারে দলীয় মনোনয়নের কথা উল্লেখ করেছেন সেসব ব্যানার পোস্টার নামিয়ে ফেলতে প্রার্থীদের কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। আর এই বিষয় তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এমন অব্স্থায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়েও দাবি উঠেছে, দল মনোনীত ও বিদ্রোহী— ঘরের ভেতরে এরকম বিভেদ জিইয়ে না রেখে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য। তারা বলছেন, কাউন্সিলরের ভোট উন্মুক্ত হলেই ভালো— যিনি জনপ্রিয়, তিনিই ভোটে জিতে আসবেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়ে ৫৪ জনের তালিকা প্রকাশ করেছিল আওয়ামী লীগ। এই তালিকা থেকে বাদ পড়েন অন্তত ১৩ জন সদ্য সাবেক কাউন্সিলর। যাদের অনেকেই স্থানীয়ভাবে বেশ জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী। এর মধ্যে ১২ জন নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন। এর বাইরেই সবমিলিয়ে ৪১ ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হওয়া অন্তত অর্ধশত বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।

শুরুতে বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরাতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কঠোর অবস্থান দেখালেও করোনায় স্থগিত হওয়ার পর চসিক নির্বাচনের নতুন ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণার পর সেই ‘তেজ’ আর দেখা যায়নি আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে।

এক পর্যায়ে চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বিদ্রোহী বলে কিছু নাই। আমাদের দলীয় প্রার্থী আছে। এর বাইরে যারা প্রার্থী তারা আমাদের কেউ নয়। তাদের দায়িত্বও আমাদের নয়।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, করোনাকালে বিভিন্নভাবে বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেকেই নিজেদের মত করে মাঠ গুছিয়ে নিয়েছেন। নিজেদের পর্যবেক্ষণে দলের হাই কমান্ডের নেতাদের অনেকেই এটা বুঝতেও পারছেন। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের শক্ত অবস্থানের তথ্য উঠে আসছে।

সূত্রে জানা গেছে, সরকারের বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা মাঠপর্যায়ে জরিপ চালিয়ে দেখেছে, বেশ অনেকগুলো ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের চেয়ে দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থীদের অবস্থান তুলনামূলক ভালো। এছাড়া আরও অনেক এলাকাতেই দল সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

এদিকে নির্বাচনের শেষ পর্যায়ে এসে নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান নেই জানিয়ে প্রচার-প্রচারণায় দলীয় মনোনয়নের কথা ব্যবহার না করতে প্রার্থীদের সতর্ক করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে যেসব প্রার্থী নিজেদের পোস্টার ব্যানারে দলীয় মনোনয়নের কথা উল্লেখ করেছেন সেসব ব্যানার পোস্টার নামিয়ে ফেলতে প্রার্থীদের কড়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। আর এই বিষয় তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদেরও নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অনেক উর্ধতন নেতাও চট্টগ্রাম সিটির ভোটে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরছেন ঘরোয়া আলোচনায়।

গত ১৪ জানুয়ারি নগরের দারুল ফজল মার্কেটস্থ দলীয় কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের একটি সভায় এই প্রসঙ্গে খোলামেলা আলোচনাও হয়। বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাদের যারা সহযোগিতা করছেন তাদেরকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে চিঠি দেওয়ার পরামর্শ দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। এ সময় সভায় উপস্থিত একজন নেতা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জিতে আসার উদাহরণ উপস্থাপন করলে নওফেল বলেন, ‘সেখানে ২-৩ জনের বেশি জিততে পারেননি। তাই বলে কোনোভাবেই আমরা দল মনোনীতদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারি না।’

তবে এই বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের অবস্থান অনেকটাই স্পষ্ট। সবশেষ ২০ জানুয়ারি দলীয় কার্যালয়ে এক বর্ধিত সভা শেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ সাংবাদিকদের জানান, বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের সুপারিশ পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে।

কত জনকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে এই বিষয়ে জানতে সভায় উপস্থিত একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করা হলেও সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে নির্বাচনী প্রেক্ষাপট অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই যে বিতর্ক ছিল তার প্রেক্ষিতে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন উন্মুক্ত করে দেওয়ার একটা দাবি শুরু থেকেই তোলা হচ্ছিল। যতই দিন যাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের তরফ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনার পাল্লা ক্রমশ ভারী হচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত কী হচ্ছে সেটি আরও ২-৩ দিন পর স্পষ্ট হবে বলে মন্তব্য তাদের।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!