কলহে পুড়ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগ

হঠাৎ করেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। গত ১৩ আগস্ট এক দিনেই চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

মূলত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবসকে কেন্দ্র করেই হঠাৎ চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে এই উত্তাপ ছড়িয়েছে বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একক আধিপত্য ধরে রেখেছে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা। নাছিরের অনুসারীদের বাইরে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বলয় তৈরি হোক স্বাভাবিকভাবেই এমনটি চান না দীর্ঘদিন ধরে চমেকে আধিপত্য ধরে রাখা এই বলয়টির শীর্ষ নেতারা।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলয়ের বাইরে ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করছে একটি গ্রুপ। স্থানীয় রাজনীতিতে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলের অনুসারী এসব নেতারা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতেই ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন এই বলয়ে থাকা অভিজিৎ দাশ নামে চমেক ছাত্রলীগের এক নেতা।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে অভিজিৎ দাশ বলেন, ‘চমেকে রীতিমতো ছাত্রলীগের রাজনীতিও নিষিদ্ধ। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র কিংবা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের বাইরে ব্যক্তি আ জ ম নাছির উদ্দিনের স্বাক্ষরে এখানকার কমিটি দেওয়া হয়। এর বাইরে সব রকম কর্মসূচিতে বাধার সৃষ্টি করে একটি বলয়। আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’

অভিজিৎ দাশ বলেন, ‘১৩ আগস্ট আমরা হলে গিয়েছিলাম জাতীয় শোক দিবস পালন করতে। আমরা শোক দিবস পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছি— এটা বুঝতে পেরে তারা ক্যান্টিনে ঝামেলা বাঁধায়। তাদের ইচ্ছার বাইরে সব কিছুতেই বাধা দেওয়া হয় এটা আমরা জানি। কিন্তু শোক দিবস পালন করতে গিয়ে এই ধরনের বাধার মুখে পড়বো এটা আমরা ভাবতেও পারিনি।’

তবে এই ধরনের অভিযোগকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা। তারা বলছেন, জামায়াত-শিবির সম্পৃক্ততা ও বিভিন্ন অনিয়মে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছিল চমেক ছাত্রলীগ। বহিষ্কৃত সেসব নেতাদের নেতৃত্বেই সংঘাতময় হয়ে উঠছে চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতি।

চমেক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন ইসলাম শিমুল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ১৫-২০ বছরে চমেকে কোন সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সর্বশেষ কমিটি থেকে কয়েকজনকে আমরা বহিষ্কার করেছিলাম জামায়াত শিবির সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে। তারা এখন উপমন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।’

চমেক ছাত্রলীগের কমিটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমোদন প্রাপ্ত কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে আল আমিন ইসলাম শিমুল বলেন, ‘আমাদের এখানে দীর্ঘদিন ধরে প্রতি বছর বছর নতুন কমিটি দেয়া হচ্ছে ছাত্রলীগের। এটি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অনুমোদিত হয়তো নয়, তবে আমরা খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুরো প্রক্রিয়াটা সম্পন্ন করি।’

এদিকে মারামারি ও দুই শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪ আগস্ট দিনভর কর্মবিরতি পালনের পর রাতে তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

জাতীয় শোক দিবস এবং ইন্টার্ন ডাক্তারদের ওপর হামলার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়ায় ৬০ ঘন্টার জন্য এই কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ডা. তাজওয়ার রহমান খান।

বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও মারামারি হয়। এর জেরে দুই পক্ষই চকবাজার থানায় অভিযোগ করেন।

বিকেলের ঘটনায় অভিযোগ দিতে গিয়ে চকবাজার থানার গুলজার মোড় এলাকায় রাত ১১টার দিকে আবারও সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এতে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ডা. ওসমান গণি এবং ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক সানি হাসনাইন প্রান্তিক আহত হন। এই ঘটনায় রাতেই অভিযান চালিয়ে চমেক ছাত্রলীগের ১১ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ১৪ আগস্ট আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন সেই ১১ নেতা।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!