কর্মী নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতিতে জড়াল বাঁশখালী পৌরসভা

১ নম্বরের বদলে চাকরি পেল ৫ নম্বর

চট্টগ্রামের বাঁশখালী পৌরসভায় পাঁচটি পদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সহকারী কর আদায়কারী পদের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থীর পরিবর্তে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পঞ্চম স্থান পাওয়া এক নারীকে। রোববার ওই নারী কর্মস্থলে যোগদান করলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর নিজের নিয়োগপত্র চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন নিয়োগ বঞ্চিত হওয়া প্রার্থী নওয়াজীশ হোসাইন তানভীর।

নিয়োগ কমিটির জেলা প্রশাসক মনোনীত সদস্য ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় নিয়ে যিনি প্রথম হয়েছেন তাকেই নিয়োগ দিতে আমরা সুপারিশ করেছি। এখন মেয়র অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এখন যদি নিয়োগে অনিয়ম করা হয় তাহলে ডিসি স্যার বরাবরে অভিযোগ দিতে পারেন বঞ্চিত কেউ। অভিযোগের তদন্তকালে নিয়োগ অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’

জানা যায়, গত বছরের ৭ অক্টোবর সহকারী কর আদায়কারী, সহকারী লাইসেন্স পরিদর্শক, সড়ক বাতি পরিদর্শক, জিপ চালক, অফিস সহায়ক (এমএলএসএস) ক্যাটাগরীর পাঁচটি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে সহকারী কর আদায়কারী পদে ২৭ জন আবেদনকারীর মধ্যে ২৩ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৪জন প্রার্থী। যার মধ্যে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন ১৩ প্রার্থী। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মিলিয়ে ১৩জন প্রার্থীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন উত্তর জলদীর নওয়াজীশ হোছাইন তানভীর। তাকে নিয়োগ দিতে কার্যবিবরণী প্রস্তুত করে সুপারিশও করে গঠিত নিয়োগ কমিটি। যার কপি স্থানীয় সরকার বিভাগেও পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় নিয়োগ কমিটি। কিন্তু এ সুপারিশ অমান্য করে সহকারী কর আদায়কারী পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে দক্ষিণ জলদীর সুমি ধর নামে এক নারীকে।

নিয়োগ অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির আহবায়ক ও পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী বলেন, ‘অফিসে আসেন, চা-পানি খেয়ে যান। ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।’

বাঁশখালী পৌরসভার সচিব ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব নুরুল আবচার বলেন, ‘আমরা নিয়োগ কমিটিতে যারাই ছিলাম সবাই যে প্রথম হয়েছে তাকেই নিয়োগ দিতে সুপারিশ করেছি। এখন মেয়র নিজের ইচ্ছাতে কাউকে নিয়োগ দিলে বিষয়টি আমার জানা নেই। তাছাড়া আমি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে এসেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে কোন টাকা-পয়সা লেনদেনে নেই।’

নিয়োগ বঞ্চিত হওয়া আরও দুজন প্রার্থী অভিযোগ করেন, লিখিত পরীক্ষাতেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। শুধুমাত্র সহকারী কর আদায়কারী পদে লিখিত পরীক্ষায় প্রথম হওয়া তানভীরকে ঠেকাতে পারেনি। বাকি চারটি পদেই আগে থেকে পৌরসভায় অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করা প্রার্থীরাই লিখিত পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। সব প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেছেন পৌর মেয়র। যা তদন্ত করলেই বের হবে। অবশ্য এর আগে একজনকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার অডিও রেকর্ড ভাইরাল হলেও মেয়রের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পরীক্ষায় প্রথম হয়েও নিয়োগ বঞ্চিত হওয়া প্রার্থী নওয়াজীশ হোসাইন তানভীর বলেন, ‘পরীক্ষায় ১৪ জন পাস করলেও মৌখিক পরীক্ষা দিয়েছেন ১৩ জন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা মিলিয়ে আমি প্রথম হই। কিন্তু মোটা অংকের টাকা লেনদেন করে পৌর মেয়র একজন মহিলাকে অফিসে বসিয়েছেন। পাঁচটি পদের নিয়োগ হলেও তিনটি পদে নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়েছে। অন্য দুটি পদে নিয়োগ পত্র দেয়া হয়নি বলে জেনেছি। পুরো বিষয়টি এসি ল্যান্ড দেখভাল করলেও সবার অজান্তে নিয়োগ দিয়েছেন পৌর মেয়র। আমি এ নিয়োগ চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েছি। প্রয়োজনে আদালতে যাবো।’

নিয়োগ কমিটিতে থাকা কাউন্সিলর রোজিয়া সোলতানা রুজি বলেন, ‘প্রথম হয়েছে তানভীর। আমরা সবাই তানভীরকে চাকরি দেওয়ার পক্ষেই ছিলাম। কিন্তু মেয়র একক ক্ষমতাবলে পঞ্চম হওয়া এক মহিলাকে চাকরি দিয়েছেন। এ বিষয়ে মেয়রের সাথেও কথা বলেছি। উনি নিজের মতো করে নিয়োগ দিয়েছেন। কিভাবে নিয়োগ দিয়েছেন উনিই ভালো বলতে পারবেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!