কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাণনাশের ‘হুমকি’ চবি কর্মচারী সমিতির সম্পাদকের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম শহীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক দপ্তরের বেতন ও ভাতা শাখা-২ এ কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শাখায় কর্মরত নয় জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামকের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর তারা এই অভিযোগ করেন।

অভিযোগ পত্রে লেখা হয়, গত ২ মার্চ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসাব নিয়ামক দপ্তরের ২ নম্বর শাখায় এসে অতর্কিতভাবে দরজায় লাথি মারেন এবং সেকশনের সকলককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন এবং দরজায় তালা লাগিয়ে যেতে যেতে সকলকে জীবন নাশের হুমকি দেন। তাৎক্ষণিক শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কিছুই বুঝতে পারেননি।

পরবর্তীতে জানা যায় যে, কর্মচারী সমিতির সভাপতির মতে, নিয়মানুযায়ী চিকিৎসা ঋণ প্রদানের আদেশকে অমান্য করে প্রায় ২-৩ মাস ধরে চিকিৎসা ঋণ নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রদানের জন্য উপ-হিসাব নিয়ামক সাহেবকে চাপ প্রয়োগ করে আসছে। তিনি এতে অপারগতা প্রকাশ করলে নুরুল ইসলাম শহীদ এ ঘটনা ঘটান।

অভিযোগে আরও লেখা হয়, ‘এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরীবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে বেতন ও ভাতা শাখা-২ এর প্রধান ইফতেকার উদ্দীন মো. আলমগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে শহীদ আমাকে কয়েকটা চিকিৎসা ঋণের জন্য বলেছে। ফান্ড সমস্যার কারনে আমি তাকে ঋণ দিতে পারি নাই। ঘটনার সময় আমি অফিসে ছিলাম না। অফিসে আসার পর সহকর্মীরা জানিয়েছে শহীদ নাকি এসে সবার সাথে উচ্চবাচ্য ও খারাপ ব্যবহার করে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে। পাশাপাশি অফিসে তালা লাগিয়ে দিছে। এ ঘটনায় আমরা অফিসের সবাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দিয়েছি।’

এ দিকে এই ঘটনাকে সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত ‘ইন্টারেস্ট’ জানিয়ে এর দায়ভার সংগঠন নিবে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন চবি কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার।

তিনি বলেন, ‘উক্ত ঘটনার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতির কোন সম্পৃক্ততা নেই। এটা সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত ইন্টারেস্ট। পদের অপব্যবহার ও প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যাক্তিগত সুবিধা আদায়ে সাধারণ সম্পাদক সর্বদা তৎপর। যা ইতোপূর্বে কর্মচারী সমিতির একাধিক সদস্য ও প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এমন কর্মকান্ডে কর্মচারী সমিতির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে বলে আমি মনে করি। আমরা ও ঘটনায় বিব্রত। আমরা কার্যকরী সংসদের সভায় আলোচনার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত নুরুল ইসলাম শহীদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর স্যার যখন আমার অভিযোগ শুনে বিচার করবে বলছে তখন তারা বাঁচার জন্য এই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে এই অভিযোগ দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে হিসাব নিয়ামক সাহেবকে অভিযোগ দিয়ে বলেছি আপনার অফিসে এই অনিয়ম হচ্ছে আপনি এসব দেখেন। তখন হিসাব নিয়ামক শাখা প্রধান ফরিদ ও ইফতেকারকে ডেকে বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিছেন। এরপরও তারা সমাধান করে নাই। কাল যখন আমি তালা মারছি তখন প্রক্টর স্যার বলছে তোমার কি সমস্যা আমি দেখবো, তুমি তালা খুলে দাও। তখন আমি গিয়ে দেখি সেখানে রেজিস্ট্রার স্যারও আছেন। তখন তিনি কয়েকটা প্রশ্ন করেছেন আমি উত্তর দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের সামনে আমার অভিযোগগুলো বলেছি। তখন রেজিস্ট্রার স্যার হিসাব নিয়ামককে জিজ্ঞেস করেছেন আমি অভিযোগ দিয়েছি কিনা। তিনি বলেছেন অভিযোগ পেয়ে ইফতেকার ভাইকে দিয়েছে। তখন রেজিস্ট্রার স্যার ইফতেখারকে জিজ্ঞেস করেছে আপনি অভিযোগ পেয়েছেন। তিনি বললেন আমি অভিযোগ পেয়ে ফরিদ সাবকে দিয়েছি। পরে ফরিদ সাবকে কাজ না করার কারন জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেন নাই। পরে রেজিস্ট্রার স্যার আমাকে বলেছেন ভিসি ম্যাম আসলে তিনি কথা বলে একটা ব্যবস্থা নিবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব নিয়ামক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ফরিদুল আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা একটা অভিযোগ পেয়েছি। খতিয়ে দেখা হবে।’

এমআইটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!