কর্তা বদলালেও সম্পর্কে তিক্ততা কমেনি সিডিএ-সিটি কর্পোরেশনে

সিডিএর কাজে ভাগ বসাতে চায় চসিক, মন্ত্রণালয়ে ধর্না

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুচ ছালামের মধ্যে ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক। আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং আব্দুচ ছালাম কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। দুই প্রতিষ্ঠানের দুই প্রধান কেউ কাউকে ছাড় দিয়ে কথা বলতেন না। চট্টগ্রাম মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে মেগা প্রকল্প সিডিএর অধীনে অনুমোদন হওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিক্ততার সম্পর্ক চরমে গিয়ে ঠেকেছিল। সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে এম জহিরুল আলম দোভাষ নিয়োগ পাওয়ার পর দুই সংস্থার মধ্যে সম্পর্কের পাথর গলবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছিলেন। তবে এ ধারণা ক্রমেই ভুল প্রমাণিত হচ্ছে।

নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ না হওয়া, জলাবদ্ধতা ও যানজটসহ পাহাড়সম অভিযোগ এনে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম নগরী তৈরিতে সিডিএর ভবন নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ভাগ বসাতে চায় চসিক। এ পরিপ্রেক্ষিতে দুই সংস্থার মধ্যে তিক্ততা আবারো বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

জানা গেছে, ভবন নির্মাণের কাজ তদারকি সংক্রান্ত বিষয়ে সিডিএর বিভিন্ন দুর্বলতা চিহ্নিত করে গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে একটি দাপ্তরিকপত্র দিয়েছে চসিক। এতে সিডিএর ভবন নির্মাণ তদারকি কাজে চসিকের অন্তর্ভুক্তি চাওয়া হয়েছে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন, ভূমি ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ চউকের এখতিয়ার ভুক্ত। সে মোতাবেক চউক নগরীর বিভিন্ন স্থানে তার ভূমি ব্যবহার নীতিমালার আলোকে ভবনের নকশা অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু লোকবলের অভাব এবং বিভিন্ন বাস্তবতার কারণে চউক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মিত হচ্ছে না। এমনকি ভবনসমূহের ব্যবহারও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে সংকীর্ণ রাস্তার পাশে যাচ্ছে তাইভাবে উঁচু ভবন নির্মিত হচ্ছে। ভবনসমূহের পাশে এবং সামনে-পিছনে নিয়ম অনুযায়ী জায়গা ছাড়া হচ্ছে না। আবাসিক ভবন নির্মাণ করে সেখানে অপরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এমনকি মার্কেট, স্কুল-কলেজ ও হাসপাতাল পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে নগরীতে প্রতি নিয়ত অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে সাথে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা, ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও যানজটের মত সমস্যা ক্রমাগত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।’

ওই পত্রে, নগরীতে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং চট্টগ্রামে পরিকল্পিত নগরায়ন সুনিশ্চিতকরণে চউকের অনুমোদিত ভবনসমূহের নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং নগরীর অন্যান্য সেবা সংস্থা যেমন- চট্টগ্রাম ওয়াসা, পিডিবি, কর্ণফুলী গ্যাসকে অন্তভুক্ত করা হলে অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী ভবন নির্মাণ নিশ্চিত করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা।

জানতে চাইলে মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে কোন ভবনে আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস ঠিকমত কাজ করতে পারে না। আমরা মনে করি, ভবনগুলো নিয়ম মেনেই অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু ভবন তৈরির সময় নকশা বাস্তবায়নে তদারকি করা হয় না। সিডিএর জনবল সংকটের কারণে এমন হয়। তাই আমরা বলেছি, ‘‘ভবন তৈরির মাঠ পর্যায়ের তদারকি কাজে চসিক ও ওয়াসাসহ অন্যান্য সংস্থাকে যেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!