কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগোল ৪৫ ভাগ, খনন হল ২০০ মিটার

৩১৩ একর ভূমি হস্তান্তর, আরও বাকি ৭১ একর

বোরিং কাজের উদ্বোধনের চার মাসের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন টানেল নির্মাণ প্রকল্পে দুই মিটার দৈর্ঘ্যের ১০০টি ‘টানেল বোরিং মেশিন’ (টিবিএম) বসানোর কাজ অর্থাৎ ২০০ মিটার টানেল খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

‘ওয়ান সিটি অ্যান্ড টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তিসহ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চার লেন বিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ মূল টানেলে দুটি টিউব থাকবে এবং টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে।

চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা এলাকায় এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম শহরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়ান হাইওয়ের সংযোগ স্থাপনসহ কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সাথে ডাউনটাউনকে যুক্ত করবে এটি। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত হবে। এছাড়া এই টানেলের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

টানেলটি চট্টগ্রামের আনোয়ারা (পূর্ব প্রান্ত) উপজেলাকে শহরাঞ্চলের (পশ্চিম প্রান্ত) সাথে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে নয় হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেবে তিন হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা এবং চীন সরকারের অর্থ সহায়তা পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এ প্রকল্পে মোট দুই হাজার ১৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জুন ২০১৯ পর্যন্ত অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে ৭৪০ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে টানেলটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় মোট ভূমির পরিমাণ ৩৮৩ দশমিক ৪৯২১ একর। ইতিমধ্যে ৩১৩ দশমিক ১৪১১ একর ভূমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৭০ দশমিক ৩৫১ একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব বর্তমানে ভূমি মন্ত্রণালয় ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্প সাইটে পানি সংযোগ দেওয়ার জন্য বগুড়ার আরডিএর মাধ্যমে পতেঙ্গা প্রান্তে দুটি এবং আনোয়ারা প্রান্তে দুটিসহ মোট চারটি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।

পতেঙ্গা ও আনোয়ারার উভয় প্রান্তে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পতেঙ্গা প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থায়ী সংযোগ ২০১৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া গেছে। আনোয়ারা প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট সাব স্টেশনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের ১২১টি কেস্ট-ইন-সিচু বোরড পাইলের মধ্যে ৯৪টির (৭৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ) নির্মাণ কাজ এবং ১০৩টি কংক্রিট পিলারের মধ্যে ৯০টির নির্মাণকাজ (৮৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ) শেষ হয়েছে।

বর্তমানে আনোয়ারা প্রান্তে সার্ভিস এরিয়ার বালি ভরাটের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪১ ঘনমিটার (৯০ দশমিক ৫৮ শতাংশ) বালি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চীনের জিয়াংসু প্রদেশের জেংজিয়ান শহরে টানেল সেগমেন্ট নির্মাণ প্ল্যান্টে সেগমেন্ট নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে ১৯ হাজার ৬১৬টি সেগমেন্টের মধ্যে ৯ হাজার ৭৮৭টি (৪৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ) সেগমেন্টের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত চার হাজার ৮০৮টি সেগমেন্ট চট্টগ্রামে প্রকল্প সাইটে পৌঁছেছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের ৩৮ দশমিক ৪২ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি এবং ৪৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বাস্তব ভৌত অগ্রগতি হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী সোমবার (১৫ জুলাই) রাতে মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেলের কাজ এগিয়ে চলছে। এই পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ ভৌত অগ্রগতি হয়েছে। মোবাইলে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!