কর্ণফুলী ও হালদাসহ ৫৪ নদী দূষণমুক্ত করতে আইনি নোটিশ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা নদীসহ দেশের ৫৪টি নদী রক্ষায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। লিগ্যাল নোটিশে দেশের ৫৪টি দূষিত নদীসমূহকে দূষণমুক্ত করতে একটি সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই নোটিশে বলা হয়, চট্টগ্রামের কর্ণফুলীসহ বেশ কিছু নদীর পানিতে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ধাতু মাটির উর্বরতা বিনষ্ট করছে।

সোমবার (১৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষ থেকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে নদীসমূহের দূষণের উৎস চিহ্নিতকরণ ও দূষণকারীর পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত ও দূষণ প্রতিরোধ, দূষণকারীকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি প্রদান ও ক্ষতিপূরণ আদায় এবং অতি দূষিত ও প্রাণহীন নদীগুলোকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন ঘোষণা ও সেই অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দাবি জানানো হয়েছে।

নোটিশে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, শিল্প, নৌ পরিবহন, ভূমি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ, পানি সম্পদ, কৃষি, অর্থ, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নদীগুলো হলো— চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও হালদা, ঢাকা বিভাগের বুড়িগঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, মেঘনা, বালু, আড়িয়াল খাঁ, ময়নাকাটা, বিলপদ্ম, কীর্তিনাশা, সুতি, পারুলি, চিলাই, কালিগঙ্গা, পদ্মা, বানার, লৌহজং, বংশী; রাজশাহী বিভাগের যমুনা, করতোয়া, গঙ্গা, আত্রাই, নারোদ, ইছামতি; রংপুর বিভাগের তিস্তা, খড়খড়িয়া; ময়মনসিংহ বিভাগের ক্ষীরু; চট্টগ্রাম বিভাগের বিল ডাকাতিয়া, তিতাস; খুলনা বিভাগের ময়ূর, ভৈরব, রুপসা, মাথাভাঙ্গা, পশুর, কাকশিয়ালী, গড়াই, মধুমতি, কুমার; বরিশাল বিভাগের কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া, খাকদোনা, শিববাড়ীয়া এবং সিলেট বিভাগের সুরমা, কুশিয়ারা, সুতাং, সোনাই, কোরাঙ্গী, বরাক ও ধোলাই।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, নদীদূষণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু বুড়িগঙ্গা নয়, আশপাশের তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বরীরও একই হাল। এসব নদ–নদীতে জলজ প্রাণ ধারণ করার জন্য পানির মান যা থাকা উচিত, তার চেয়ে ঢের কম। মাঝে গত বছর করোনারা কারণে লকডাউনের সময় কিছু এলাকার পানির মানের উন্নতি হয়েছিল। এখন সেই আগের হাল। এ কারণে দেশের অর্ধশতাধিক নদী রক্ষায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।

দেশের নদ-নদী, জলাভূমি দখল ও দূষণ প্রতিরোধে কঠোর আইন করা, নৌপথকে সচল রাখতে নদীগুলোকে খনন করা, নদী ও জলাভূমির দূষণ রোধে সব কারখানায় শিল্পবর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণে সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকারি বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা, ব্যক্তিবিশেষের গবেষণা এবং সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে দূষিত নদীগুলো চিহ্নিত করে নোটিশে যুক্ত করা হয়েছে। এসব গবেষণায় ঢাকা ও আশপাশের ৬টি যথা: বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী ও মেঘনা নদী দূষণের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। এছাড়া চট্টগ্রামের কর্ণফুলী, দেশের উত্তরাঞ্চলের করতোয়া, তিজ্ঞ, আত্রাই, পদ্মা, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কীর্তণখোলা, রূপসা ও লোয়ার মেঘনা নদীসমূহের পানিতে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ধাতু মাটির উর্বরতা বিনষ্ট করছে।

সেচ কাজে এ পানি ব্যবহারের ফলে খাদ্যের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতু মানবদেহে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করছে। লোয়ার কুমার, ধলেশ্বরী, বালু, সুতি, পারুলি এবং চিলাই নদীতে শিল্পদূষণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মর্মে গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!