কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের কমিটিতে বিএনপি নেতা-নাশকতার আসামি-বহিষ্কৃত সবাই আছেন

তিনবারের সেক্রেটারির ভাগ্যে মোটে সদস্যের সান্ত্বনা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ত্যাগীদের পরিবর্তে কমিটিতে বিএনপি নেতা, নাশকতা মামলার আসামি, সুযোগসন্ধানী-অনুপ্রবেশকারী, চোরকারবারী ব্যবসায়ী ও অপরিচিত ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের কমিটিতে বিএনপি নেতা-নাশকতার আসামি-বহিষ্কৃত সবাই আছেন 1

সম্মেলনের ৩ মাস ২৬ দিন পর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। শনিবার (২৫ মার্চ) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর উপজেলার ফকিরনীরহাট কর্ণফুলী টানেল সড়কে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে এ ফারুক চৌধুরী কে উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মো. সোলায়মান তালুকদার কে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়।

সদ্য ঘোষিত কমিটিতে ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও নাশকতা মামলার আসামিকে সম্পাদকীয় পদ, বহিস্কৃত নেতাদের পদায়ন, রাজনীতিতে সক্রিয় নন এমন নেতাদের পদোন্নতি, বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সম্পাদককে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বিগত সময়ে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও আর্থিক সহযোগীদের নির্বাহী সদস্য করার মতো অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তারা হলেন— সহ সভাপতি পদে নজরুল ইসলাম টুকু, এসএম হোসেন, রফিক আহমেদ, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, মো. ইসমাইল, সেলিম উল্লাহ খাঁন, শহীদুল আলম চৌধুরী, ছাবের আহমেদ, মো. আবু তৈয়ব।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে এম এ হালিম, রফিউল কবির লিটু, সেলিম হক।

সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল রহমান মিলন, মো. জয়নাল আবেদীন বাবু, আলমগীর খসরু।

কমিটিতে রয়েছেন— আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট নাজমুল আহসান খাঁন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. হারুন চৌধুরী নেভী, তথ্য ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক এস এম রফিক উল্লাহ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মো. আজাদ, দপ্তর সম্পাদক আমজাদ হোসাইন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক হাফেজ মো. শাহ আলম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার হাসমত আলী, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ জালাল আহমেদ রুম্মান, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রত্না দত্ত, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিঃ ইয়াছিন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক শহীদ উল্লা মিয়া, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নুর আহমদ, শ্রম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ সেলিম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মামুনুর রশীদ তালুকদার, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক মো. আইয়ুব তালুকদার। সহ দপ্তর সম্পাদক মো. সোলাইমান, সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল করিম ফোরকান।

এছাড়াও কমিটিতে ৩৫ জন কার্যকারী সদস্য হয়েছেন সাজ্জাদ আলী খান, মো. আলী, হায়দার আলী রনি, মো. রাজ্জাকুল হায়দার, মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুস, মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর, আবদুল করিম, মেজবাহ উদ্দিন খান, মো. ফোরকান, এমএ মারুফ, আবদুস সালাম, ইদ্রিস সওদাগর, কাজী মাসুদ হাসান, আমজাদ হোসেন, সাইফুদ্দিন টিপু, ইদ্রিস বাবুল, মো. এজাহার, মো. হারুন, তাওফিকুল মওলা সুজন, মো. ইয়াছিন, সুলতান তালুকদার, খলিল আহমেদ, মো. মাহবুব আলম তারা, আবদুল মজিদ, মহিউদ্দিন বকুল, আবদুর শুক্কুর, দিল আহমেদ শাহীন, জালাল আহমেদ, নাছির উদ্দীন, আকাশ ওসমান, মো. নুরুচ্ছফা, মো. ইব্রাহিম, বাসু দেব ও হুমায়ুন কবির খোকন।

অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে সহ সভাপতি পদ পাওয়া ছাবের আহমেদ ২০২২ সালে নৌকার বিপক্ষে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করেছেন। যে কারণে কিছুদিন আগে তাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য থেকে বহিষ্কার করা হয়। এমনকি রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় নন বলে তৃণমূল নেতারা জানান। কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া সেলিম হক বর্তমান উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। অথচ তিনবারের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনিকে সদস্য করা হয়।

জানা যায়, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পাওয়া রাশেদুল রহমান মিলন কর্ণফুলী উপজেলা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। তিনি মহানগর রাজনীতির সাথে জড়িত এবং একজন ভালো ক্রীড়া সংগঠক তিনি। এছাড়াও সাংগঠনিক পদ পাওয়া মো. জয়নাল আবেদীন বাবু বড়উঠান ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এমনকি তিনি সরকার বিরোধী নাশকতা মামলার আসামিও।

অপরদিকে, কার্যকরী সদস্য মো. ইব্রাহীম ২০০২ সালে শিকলবাহা ১ নম্বার ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও অর্থ সহায়তাদানকারী ছিলেন। এক ছবিতে দেখা যায় তাকে চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনের বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি সরওয়ার জামাল নিজাম কে ফুলের তোড়া উপহার দিচ্ছেন। জুলধার তেল শুক্কুর প্রকাশ আবদুর শুক্কুরও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্য হয়েছেন।

গত কমিটিতে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘এই কমিটি মনগড়া কমিটি হয়েছে। দলের ত্যাগী-পরীক্ষিত ও জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীদের বাইরে রেখে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারীদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব চাই। বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে পকেট কমিটি করে ঘোষণা দেবে, তা হতে পারে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিষয়টি জানানো হবে।’

কর্ণফুলী উপজেলার সাবেক ছাত্রনেতা মো. আলমগীর কবির তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন ‘রাজনীতিতে গ্রুপিং এটা রাজনীতির একটা অংশ, কিন্তু বড়দের রাজনীতির মাঝে কাউকে ছোট করে দেখানো সেটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নহে। ছোটরা আপনাদের কাছ থেকে কি এটাই শিখবে? আজকের দিন আপনার, কিন্তু কাল আপনার নাও হতে পারে। একজন সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিভাবে বর্তমান কমিটির তিন নাম্বার সদস্য হয়? সেটা আমার বোধগম্য নহে। এ ধরনের রাজনীতি মরহুম আক্তারুজামান চৌধুরীর বাবু ভাইয়ের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে শেখায়নি। আপনারা কোথায় পেলেন?’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!