কর্ণফুলীর নয়াহাট সেতুর ২৬ বছর কেটেছে পাকা সেতুর আশ্বাসে

ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে মানুষ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের লোহার তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ নয়াহাট সেতু ২৬ বছরেও পাকা হয়নি। এই দীর্ঘ সময়ে একাধিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে আসলেও তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন, সেতু পাকা করতে পারেননি।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবের ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আসেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সেই সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হলে নয়াহাট সেতু লোহার পাটাতন দিয়ে তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র। যা পরে ১৯৯৮ সালে তৈরি শুরু হয়। ২০০০ সালের ২৯ জানুয়ারি সেতুটি উদ্বোধন করেন তিনি। এর আগে ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছিল কাঠের একটি সাঁকো।

স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর চরপাথরঘাটার বাদামতলে এক উঠান বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও মহাজোট মনোনীত প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছিলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে কর্ণফুলীতে প্রথম কাজ হবে নয়াহাট সেতু নির্মাণ’।

এলাকার মা-বোনদের উদ্দেশ্যে তখন তিনি বলেছিলেন, ‘ধানের শীষ এখন পেটের বিষ হয়ে গেছে। আপনারা ধানের শীষের জন্য পাগল হবেন না। আপনাদের এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমার। নো চিন্তা, ডু ফূর্তি। কর্ণফুলী উপজেলা যখন করতে পেরেছি আমি আশা করি উন্নয়নও করতে পারবো।’

এর দুই বছর পর ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের নয়াহাট সেতুটি পাকা নির্মাণের দাবিতে ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছিল সামাজিক সংগঠন ‘চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাব’। ওই সময় শিল্পপতি লায়ন এমএন ছাফা, মুহাম্মদ সেলিম খাঁন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ফরিদ জুয়েল জানিয়েছিলেন, ‘স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নয়াহাট সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করতে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।’

চরপাথরঘাটা মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা মো. সেলিম হক জানান, বর্তমান ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এলাকাবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন করে সেতু তৈরি করে দেবেন, টেনশনের কিছু নেই।

২০২২ সালের ৫ জুন চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আজিমপাড়ার একটি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ মাধ্যমের সামনে একই ব্যক্তি নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সেলিম হক ১১ প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি তার ইশতেহারে জলাবদ্ধতা নিরসন ও নয়াহাট সেতু দৃষ্টিনন্দন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। যদিও তিনি নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি।

এই বিষয়ে চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবের আহমদ বলেন, ‘সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থায় আছে। তবে অনেক সময় পরিষদ থেকে সেতুটি মেরামত করে দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদও চেষ্টা করেছে। মন্ত্রী মহোদয় আমাদের বলেছেন, নয়াহাট সেতু পাকা নির্মাণ করে দেবেন।’

চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ বলেন, ‘উপজেলা ভূমি অফিস থেকে নয়াহাট খালটির বিষয়ে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। খালটির বর্তমান পরিস্থিতি ও দখলদারের বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা এবং খালখনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নয়াহাট সেতু পাকাকরণ যদিও অন্য বিভাগের।’

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘১০০ মিটারের নিচে সেতুগুলো নির্মাণ করতে ‘উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ’ শিরোনামে প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব আছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। আশাকরি শিগগির বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।’

এদিকে ২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত বিহঙ্গ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তৎকালীন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামশুল তাবরীজ বলেছিলেন, ‘দেড় বছরে যদি একটি উপজেলা সম্ভব হয়, তবে আগামীতে একটি বালিকা স্কুল, একটি মহিলা কলেজ ও একটি নয়াহাট সেতু নির্মাণ সম্ভব হবে না কেন? অনেকে জায়গা-জমি দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমিও কথা দিলাম, কর্ণফুলীর উন্নয়নের স্বার্থে যা যা করা দরকার সব ধরনের চেষ্টা করব।’

অন্যদিকে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় রয়েছে। বিগত সময়ে কাজ শুরু করা যেত কিন্তু করোনার কারণে মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হওয়ায় নয়াহাট পাকা সেতুর কাজ শুরু হয়নি। এই সেতু দিয়ে এলাকাবাসীর কষ্ট দূর করার জন্য মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি শিগগির একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!