কোনো অনিয়মই কাম্য নয়। যে কোনো কিছুতে নিয়ম মেনেই কাজ করতে হয়। যদি কাজে কোনো অনিয়ম হয়, তাহলে সে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ঠিক এরকম অনিয়ম নিয়ে কথা উঠেছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে সড়ক সংস্কার, প্রশস্তকরণ ও দুটি সেতুর নির্মাণকাজে। এ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও নানা অনিয়ম বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ এবং দুটি সেতুর নির্মাণকাজে প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়ছে। এ কাজে বিটুমিনের পরিবর্তে পোড়া মবিল দিয়ে সড়কের কার্পেটিং করছে ঠিকাদাররা। এ ব্যাপারে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছবি পোস্ট করে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আর্কষণের চেষ্টা করেছেন। এলাকাবাসী এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাইছে।
দোহাজারী সড়ক ও জনপথ উপ-বিভাগের তথ্যমতে জানা গছে, বৃহৎ এ প্রকল্পে উপজলোর মইজ্জ্যারটেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু চত্বর থেকে পুরাতন ব্রিজঘাট সড়ক-বিএফডিসি সড়ক পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশ প্রশস্তকরণ ও সড়ক সংস্কার করা হচ্ছ। এছাড়া এ সড়কে থাকা পাকিস্তান আমলের দুটি পুরাতন সেতু ভেঙে পাকা সেতু নির্মাণের কাজ চলছ। দুই সেতুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩২ মিটার ও ৩৬ মিটার, প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার । মইজ্জ্যারটেক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার বর্তমানে থাকা ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট এবং দুই কিলোমিটার সড়ক ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুটে উন্নীতকরণ করা হচ্ছে।
সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এ সড়কের প্রকল্পব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যে প্রকল্পের কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান-রানা বিল্ডার্স প্রাইভেট লিমিটেড, হাসান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড ও সালেহ আহমেদ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারের লোকজন বিটুমিনের বদলে পোড়া মবিল দিয়ে সড়কের কার্পেটিং করছে। বেশি টাকা লাভের আশায় সংস্কারকাজে বিভিন্ন উপাদান সঠিক অনুপাতে ব্যবহার করছে না।
তারা আরও বলেন, কাগজে-কলমে বিটুমিন থাকলেও ঠিকাদার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে মিলে পোড়া মবিল দিয়ে সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ করে চলেছে। এ প্রকল্পে প্রথম থেকে স্থানীয় লোকজন কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
মোহাম্মদ সোহেল নামে এক যুবক বলেন, নিম্নমানের উপাদান দিয়ে সড়কের কাজ সারা হয় বলে বারবার সংস্কারের পরও সারাবছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বাজেটে যা বরাদ্দ করা হয়, তার সবটুকু দিয়ে যদি সংস্কারকাজ হতো, তাহলে এ অবস্থা হতো না। দেখা যাচ্ছে ঠিকাদাররা পিচ পাথরের সাথে পোড়া মবিল ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে এলাকাবাসীর কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি এবং ফেসবুকেও দেখেছি। বিষয়টি দেখছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। উপজেলা প্রশাসনের এ ব্যাপারে কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’
চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদ জুয়েল অভিযোগ করেন, ‘ব্রিজঘাট সড়কের দুইপাশে যে ড্রেন তৈরি করা হয়েছে তার এখন পিচ ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এভাবে সড়ক হলে বেশিদিন টিকবে না। যদি মিলিয়ে দেয়া হয় তাহলে রাস্তা সুন্দর হবে এবং পানি জমবে না।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের পটিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্তব্য করতে আমাদের বাংলাদেশের মানুষের বিবেচনাবোধ কাজ করে না। তারা না বুঝেই এসব মন্তব্য করছে। আমরা কার্পেটিংয়ে কোনো পোড়া মবিল ব্যবহার করছি না। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিটুমিন ব্যবহার করছে। ঠিকাদারের সাথে কথা বলেই ঠিক করেছি ২ টাকা বেশি গেলেও যাতে বিটুমিনের ব্যবহার হয় এবং এর গুণমত মান ভালো থাকে। ওরা সেটাই করছে।’
ঠিকাদারের মুখপাত্র পেয়ার হোসেন বুলবুল বলেন, বরাদ্দ রয়েছে ২৪ ফুট সড়কের। কিন্তু ব্রিজঘাটের মাথায় আমরা ৩০ ফুট করেছি। যাত্রী ছাউনির দিকে আরো কাজ বাড়িয়েছি। আমরা শুধু ঠিকাদারি করতে আসিনি, দেশসেবা ও উন্নয়নে নিজেদের নিয়োজিত করতে এসেছি। সুতরাং হতাশ হবার কিছু নেই। আমরা ড্রেনের সাথে ফিনিশিং করে দেবো। কোনো গ্যাপ থাকবে না।
এ প্রকল্প সম্পর্কে সদ্য ঢাকায় বদলি হওয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত হোসেন বলেন, সড়কটির কাজ করতে আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। বিদেশ থেকে আনা পাথর ব্যবহার করা হয়ছে। জেলা শহরের সড়ক ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুট করতে আমাকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে কয়েকবার গিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে হয়েছে। এটি ইন্ডাস্ট্রিজ এরিয়া। প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে ১৬ হাজার গাড়ি চলে। সুতরাং ২৪ ফুট নয়, বরং এ রাস্তাটি চার লেন করা দরকার। তবে এটা সত্য, ফেরেশতা এনে ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করানো হলেও ১০০% কাজ আদায় করা সম্ভব না।
চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ‘আমি এলাম মাত্র কয়েকদিন হলো। এ সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই। তারপরও আমি খবর নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
সিআর