করোনা সন্দেহে স্ট্রোকের রোগীকে চিকিৎসাই দিল না পার্কভিউ হাসপাতাল

মাইল্ড স্ট্রোকের লক্ষণ নিয়ে ৬৭ বছর বয়সী মৃদুল চৌধুরী শুক্রবার (২২ মে) যান চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক্সরে করিয়ে জানান রোগীর কোনো সমস্যা নেই। কিছু থেরাপি দিয়ে রোগীকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। থেরাপি নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে পুরো একদিন সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন মৃদুল চৌধুরী।

রোববার (২৪ মে) দুপুরে আবারও রোগীর মাইল্ড স্ট্রোকের লক্ষণের মতো খাওয়া-দাওয়া, কথা বলা ও নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে ফের তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সেই পার্কভিউ হাসপাতালে। কিন্তু ওই হাসপাতালের লোকজন এবার হঠাৎ করেই পিঠটান দিয়ে বসেন। তারা এবার আর ৬৭ বছর বয়সী মৃদুল চৌধুরীকে ভর্তি করাতে রাজি নন। করোনা সন্দেহে রোগীকে এমনকি হাসপাতালের সামনে রাখতেও রাজি নয়। রোগীর স্বজনদের টানা দুই ঘন্টার আকুতি মিনতিতেও মন গলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। একদিন আগেই যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে জানালো রোগী সুস্থ।

অথচ এর মাত্র একদিন পরেই একই সমস্যা নিয়ে গেলেই জানানো হয় ‘রোগীর করোনা’ হতে পারে। শুধু করোনা সন্দেহের জেরে শেষ পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীকে ভর্তি নেয়নি পার্কভিউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে যতক্ষণ না রোগীকে করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হবে, ততক্ষণ যেকোনো রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিতে বাধ্য থাকবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর অন্যথা হলে ওই হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু পার্কভিউ হাসপাতাল এসব হুঁশিয়ারিকে পাত্তাই দেয় না। এমনই জোর তাদের।

এদিকে, কোভিড-১৯ রোগী নয়— এমন রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে ২৪ মেও বৈঠকও করে অধিদফতর। কিন্তু সেই নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্ট্রোকের উৎসর্গ আছে এমন রোগীকেও ফিরিয়ে দিল চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশের পার্কভিউ হাসপাতাল।

রোগীর ছেলে সুবীর চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘১৫ দিন আগে ছাদে হাঁটতে গিয়ে পড়ে যান তিনি। গত পরশু থেকে খাওয়া-দাওয়া, নড়াচড়া ও কথা বলা বন্ধ দেখে তাড়াতাড়ি পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে তারা থেরাপি আর এক্সরে করিয়ে বলেন রোগী সুস্থ আছেন এবং তার কোনো সমস্যা নেই। তারপর পুরো একদিন তিনি সুস্থ ছিলেন। আজ (রোববার) দুপুরে আবার একই রকম সমস্যা দেখা দেয়। উনার শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা হওয়ায় অবচেতন অবস্থায় তিনি বিছানাতেই প্রাকৃতিক কাজ করেন। আজ আবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা বলেন করোনা হতে পারে। আর সেজন্য তারা বাবাকে ভর্তি করায়নি। দুই ঘন্টা ধরে অনেক অনুনয়-বিনয়, আকুতি মিনতি করলেও তারা ভর্তি নেয়নি। এখন এমন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাবাকে বাসায় নিয়ে এলাম।’

রোগীর আরেক স্বজন বলেন, ‘হঠাৎ করে শারীরিক দুর্বলতা জনিত সমস্যা এবং সেই সাথে কথা বলা, নড়াচড়া করা এবং খাওয়া-দাওয়া বন্ধ এসব লক্ষণ দেখা দেয়। আমার ধারণা মতে এসব উপসর্গ মাইল্ড স্ট্রোকের। তাছাড়া তো উনার করোনার কোনো লক্ষণই নাই। সর্দি-কাশি, জ্বর, গলাব্যথা বা ডায়রিয়া হলেও মানা যেত। একই সমস্যা নিয়ে একদিন আগেই তাদের হাসপাতাল থেকে ট্রিটমেন্ট নিয়ে এসেছে। অথচ পরদিন তারা করোনা বলে ভর্তি নিলো না। যা সরকারি নির্দেশনার পরিপন্থী।’

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মিনহাজ রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব তো করোনার লক্ষণ না। তারপরও তারা কেন করোনা বলছেন তা আমি বুঝতে পারছি না। নরমালি মাইল্ড স্ট্রোকের এমন লক্ষণ হয়ে থাকে। তাছাড়া করোনা পজিটিভ না হওয়া পর্যন্ত রোগীকে সেবা দিতে বাধ্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের এই কাজটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে এবং এটা অনৈতিক। যেহেতু দুইদিন আগেই তারা রোগীকে ট্রিটমেন্ট দিয়ে বলেছে রোগী সুস্থ। তাহলে এখন কেন এমন বলবেন? রোগীকে এখন ভর্তি নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া উচিত।’

একই প্রসঙ্গে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর অবাক হয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজকেও বিভাগীয় কমিশনারের সাথে এ সংক্রান্ত মিটিং হয়েছে। তাও তারা এমন কাজ করেছে। আমি বিষয়টা দেখছি।’

এ বিষয়ে পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘উনি (রোগী) হাইলি সাসপেক্টেড (সন্দেহভাজন)। উনার এক্সরেতে ভালো ফাইন্ডিংস আছে। আমরা রোগীদের চিকিৎসাসেবা তো অবশ্যই দিবো। কিন্তু যেগুলো সাস্পেক্টেড ওই রোগী তো রাখা যাবে না।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!