করোনা যেভাবে হার মানলো ১০ জনের এই পরিবারে

করোনা মহামারিতে এখন আক্রান্ত হলেই মানুষ মানুষকে ছেড়ে যাচ্ছে। পর হচ্ছে পরিবারও। এর মধ্যেই উল্টো চিত্র দেখা গেল পটিয়া ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সরওয়ার কামাল রাজিবের ক্ষেত্রে। করোনায় পজিটিভ হওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হয়। একসাথে পুরো পরিবার আক্রান্ত হলেও হাল ছাড়েনি তারা। ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে নিয়ম মেনে ওষুধ ও পথ্য নিয়ে করোনাকে হারিয়ে দিয়েছে পরিবারটি। তিনিসহ পরিবারের ১০ সদস্যই এখন সুস্থ।

সুস্থ হওয়া ১০ জন হলেন সরওয়ার কামাল রাজিব (৪১), তার মা মরিয়ম বেগম (৬২), ভাই মোস্তফা কামাল সজিব (৩১), নওশাদ কামাল সিদ্দিকী (২৪), বোন জোবাইদা কামাল রানী (৪৫), ভাইয়ের স্ত্রী হিমু (২৩), পরিবারের শিশুদের মধ্যে রয়েছে তানিশা (৬), রোজা (১), সাফওয়ান সিদ্দিকী (৪) এবং কাজের ছেলে ইসমাইল (১৩)।

জানা যায়, উপসর্গ দেখা গিয়েছিল ৪ মে এরপর করোনায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে ৮ মে। তার পরে ১১ মের পরীক্ষায় পরিবারের সদস্যরাও করোনায় পজিটিভ হন।

তিনি বলেন, ‘শুরুটা ৪ মে থেকে। ১০ রমজানের দিনে মসজিদের একজন হুজুরের সংস্পর্শে এসেই আমার শরীরে জ্বরের উপস্থিতি লক্ষ্য করি। এরপর আরও তিনদিন পটিয়ায় থাকি। চতুর্থ দিনে আমি আমার স্ত্রী- সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরের (চট্টগ্রামের চান্দগাও আবাসিক এলাকা) বাসায় চলে আসলাম। এসেই আমি বিআইটিআইতে নমুনা দিই এবং ফিল্ড হাসপাতালের ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া আমাকে কিভাবে চলতে হবে কী ওষুধ খেতে হবে সেটি প্রেসক্রাইব করে বাসায় পাঠিয়ে দেন। এরই মধ্যে ৮ মে আমার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। করোনা পজিটিভ হলে এখন স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে যায় আর সন্তানরা বাবা-মাকে । ঠিক তার বিপরীতটাই হল আমার বেলায়। আমার স্ত্রী-সন্তানরা আমাকে মানসিক শক্তি যুগিয়েছে। আমার সংস্পর্শ থেকে তারাও পজিটিভ হয়। যদিও তাদের কোন উপসর্গ ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি টানা ১৪ দিন হোম আইসোলেশনে ছিলাম ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া দাদার তত্ত্বাবধানে। তিনি যে ওষুধ ও পরামর্শ দিয়েছেন তা যথারীতি ফলো করে আমি সুস্থ হয়েছি। নিয়মিত গরম পানির ভাপ নিয়েছি, রং চা পান করেছি আর যথেষ্ট পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেয়েছি।’

সরওয়ার কামাল রাজিব বলেন, ‘করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আমি মানসিকভাবে শক্ত ছিলাম। গরম পানির ভাপ, আদা, লেবু ও মসলা দিয়ে চা পান, গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা ছাড়াও আমিষজাতীয় খাবার খেয়েছি। ভয় না পেয়ে ওষুধ ও পথ্য সময়মতো খেয়ে সুস্থ হয়েছি।’

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরীক্ষার জন্য ৯ মে সরওয়ার কামাল রাজিবের পরিবারের ৯ সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করে পটিয়া হাসপাতালের কুইক রেসপন্স টিম। ১১ মে সবার রির্পোট আসে পজিটিভ। সেদিন থেকেই তাদের পরিবারের সবাইকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়। টানা ১৪ দিন হোম আইসোলেশন শেষ হলে দ্বিতীয়বারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সর্বশেষ গত ২২ মে সবার নমুনা নেগেটিভ আসলে তাদের সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এরপরও তাদের আরও অন্তত আরো ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রাম নগরে থাকা সরওয়ার কামাল রাজিবেরও গত ১৬ মে দ্বিতীয়বারের মতো নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল এসেছে। পুরোপুরি সুস্থ হলেও এখনও তিনি কোথাও যাওয়া-আসা করেননি। বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!