করোনার ভীতি ছড়াল চট্টগ্রামের অপরাধজগতেও

সিএমপির ১৬ থানায় ৩১ দিনে মামলা মাত্র ৬১৭

করোনাভাইরাস রোধে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার পর ২৬ মার্চ থেকে সবাই ঘরে অবস্থান করছেন। রাস্তায় নামলে প্রশাসনের দায়িত্বরতদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে। যারা পেশাদার অপরাধী তারাও নামতে পারছে না রাস্তায়। তাই অপরাধের চিত্রও বদলে গেছে। পুরো মার্চ মাস জুড়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ১৬টি থানায় মামলা দায়ের হয়েছে ৬১৭টি।

সাধারণ ছুটি ঘোষণা হওয়ার পর শেষ ৬ দিনে মামলা দায়ের হয়েছে ৩৯টি মামলা। ডবলমুরিং, চকবাজার ও বন্দর— এই তিনটি থানায় ৬ দিনে দায়ের হয়নি কোন মামলা। চান্দগাঁও, পাহাড়তলী, ইপিজেড আর হালিশহর থানায় হয়েছে একটি করে মামলা। অন্য ১০টি থানায় শেষ দিনগুলোতে দায়ের হওয়া মামলাগুলো পারিবারিক কলহ, মাদক আর সড়ক দুর্ঘটনার।

মার্চ মাস জুড়ে মামলার সংখ্যা বিবেচনায় সিএমপির শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ জোন। এই জোনের চারটি থানায় দায়ের হয়েছে ১৯১টি। কোতোয়ালী থানায় সর্বোচ্চ ৮৯টি, তার মধ্যে শেষ ৬ দিনে ৫টি। এই জোনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা দায়ের হয়েছে বাকলিয়া থানায় ৫৮টি— প্রথম ২৫দিনে ৪৯টি, শেষ ৬ দিনে ৯টি। তৃতীয় সদরঘাট থানায় ২৯টি মামলা— প্রথম ২৫ দিনে ২৬টি, শেষ ৬ দিনে ৩টি। জোনের সবচেয়ে কম মামলা দায়ের হয়েছে চকবাজার থানায় ১৫টি। তাও প্রথম ২৫ দিনে, শেষ ৬ দিনে এই থানায় মামলা সংখ্যা শূন্য।

উত্তর জোনের চারটি থানায় মার্চ মাসে মামলা দায়ের হয়েছে ১৬৯টি। ১ থেকে ২৫ মার্চ ১৫৯ টি, শেষ ৬ দিনে হয়ে ১০টি। এই জোনে পুরো মাসে বেশি মামলা হয়েছে চান্দগাঁও থানায়— ৫০টি। শেষ ৬ দিনে ১টি মামলা, তাও সড়ক দুর্ঘটনার। মামলার সংখ্যায় দ্বিতীয় বায়েজিদ থানা— মামলা ৪৬টি। এর মধ্যে শেষ ৬ দিনে ২টি— যার একটি মাদক, আরেকটি চুরি। তৃতীয় খুলশী থানায় ৩৭টি মামলা, শেষ ৬ দিনে ৫টা। পাঁচলাইশ থানায় মোট মামলা ৩৬টা, শেষ ৬ দিনে ২টা।

বন্দর জোনের চারটি থানায় মার্চ মাস জুড়ে মামলা হয়েছে ১৩৯টি। সর্বোচ্চ ইপিজেড থানায় ৪০টি, প্রথম ২৫ দিনে ৩৯ টি আর শেষ ৬ দিনে ১টি মামলা। দ্বিতীয় কর্ণফুলী থানায় ৩৮টি মামলা ৩৪টি প্রথম ২৫ দিনে, শেষ ৬ দিনে ৪টি। তৃতীয় বন্দর থানায় ৩৩টি মামলা যার সবগুলোই প্রথম ২৫ দিনে। শেষ ৬ দিনে কোন মামলা হয়নি। এই জোনে সবচেয়ে কম মামলা দায়ের হয়েছে পতেঙ্গা থানা ২৮টি— যার ২৬টিই প্রথম ২৫ দিনে।

পশ্চিম জোনের চারটি থানায় মার্চ মাস জুড়ে মামলা হয়েছে ১১৮টি। এর মধ্যে ডবলমুরিং থানায় সর্বোচ্চ— ৫১টি। যার সবগুলো মামলাই প্রথম ২৫ দিনে। দ্বিতীয় হালিশহর থানায় ২৮টি মামলা— যার ২৭টি দায়ের হয়েছে প্রথম ২৫ দিনে, শেষ ৬ দিনে ১টি মামলা। তৃতীয় পাহাড়তলী থানায় ২১টি মামলা। ২০টি প্রথম ২৫ দিনে, ১টি শেষ ৬ দিনে। আকবরশাহ থানায় হয়েছে ১৮টি মামলা— যার ১৫টা প্রথম ২৫ দিনে, শেষ ৬ দিনে ৩টি মামলা।

মামলার রেকর্ড বিবেচনায় সিএমপির থানাভিত্তিক সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে কম মামলাও দায়ের হয়েছে দক্ষিণ জোনের দুই থানায়। সর্বোচ্চ কোতোয়ালী থানায় ৮৯টি। সবচেয়ে কম মামলা একই জোনের চকবাজার থানায় ১৫টি। সিএমপির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মামলা দায়ের হয়েছে বাকলিয়া থানায় ৫৮টি।

সিএমপির পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার ফারুক উল হক বলেন, করোনার ভয় সবার মাঝে আছে। অপরাধীদের মাঝেও ভয় কাজ করছে। রাস্তাঘাটে তো বের হতে পারছে না। বের হলেই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে সদুত্তর দিতে না পারলে বেকায়দায় পড়তে হবে। তাই ঝুঁকিমুক্ত থাকছে, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছে না।

সিএমপির বন্দর জোনের উপ-কমিশনার মো. হামিদুল আলম বলেন, যেখানে যত মানুষ থাকবে তাদের সাথে মিশে অপরাধীরা অপরাধ কাজ সম্পন্ন করে। এখন তো কেউ মুভ করতে পারছে না। আর আমাদের থানাগুলোর বিশেষ টিম বিশেষ বিশেষ স্পটে নিয়মিত নজর তো রাখছেই। যাতে জুয়া, মাদকের মতো আসরগুলো কোথা জমতে না পারে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, অতীতের ঈদের ৩ দিনের ছুটিতেও অনেক বড় বড় ক্রাইম হয়েছে। তখন শহর ফাঁকা থাকতো। এখন সবাই যার যার ঘরে আছে। তাছাড়া করোনাভাইরাস উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সবাই মানবিক আচরণ করছে পরস্পরের প্রতি। আমাদেরও ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া আছে। আশা করি অপরাধ আরও কমে যাবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!