করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় ভেন্টিলেটর কেন এতো জরুরি?

করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য ওষুধের পরীক্ষা শেষ করে সেটাকে বাজারজাত করতে বছরদেড়েক লেগে যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীদের অনেকে। এই সময়কে কমিয়ে আনতে বিশ্বজুড়ে চলছে দৌড়। পাশাপাশি আর একটি দৌড় চলছে, কত দ্রুত সম্ভব ও কত বেশি সংখ্যায় পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য ভেন্টিলেটর তৈরি করে তুলে দেওয়া যায় চিকিৎসকদের হাতে। প্রশ্ন হল, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ভেন্টিলেটর কেন এত জরুরি?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বলছে, হাসপাতালের চিকিৎসা ছাড়াই করোনা ভাইরাসের রোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশ সেরে উঠছেন। কিন্তু আক্রান্তদের প্রতি ছয় জনের মধ্যে গড়ে এক জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এই সব ক্ষেত্রে ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুসের। শরীরের রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা সেটা বুঝতে পারে ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে জন্য বেশি সংখ্যায় রক্তকোষ সেখানে পাঠাতে থাকে। রক্তবাহিকাগুলি ফুলে ওঠে। এতে অন্য একটি সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফুসফুসে তরল ঢুকে যাওয়া। এমন ক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়া আরও কঠিন হয়ে ওঠে। শরীরের অক্সিজেনের জোগান তাতে কমে যায়।

অক্সিজেনের জোগান বাড়াতেই দরকার পড়ে ভেন্টিলেটরের। এটি অক্সিজেন-যুক্ত বাতাস পাম্প করে ঢোকায় নাক দিয়ে। ভেন্টিলেটরের বাতাসের তাপমান ও আর্দ্রতা যাতে রোগীর দেহের সঙ্গে মেলে, তার জন্য ভেন্টিলেটরে থাকে হিউমিডিফায়ার নামে একটি অংশ। শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সঙ্গে যুক্ত পেশিগুলির ওপরে চাপ কমাতে বা সেগুলো শিথিল রাখতে প্রয়োজন মতো ওষুধও দেওয়া হয়। এতে রোগী ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে তাকে হারিয়ে দেওয়ার জন্য বাড়তি সময় পেয়ে যান।

শ্বাসকষ্ট অল্প হলে সাধারণ (নন-ইনভেসিভ) ভেন্টিলেশনেই কাজ হয়। এ ক্ষেত্রে নাকে-মুখে একটি মাস্ক লাগিয়ে অক্সিজেন-যুক্ত হাওয়া বাড়তি চাপে পাঠানো হয়। কিন্তু (মেকানিক্যাল) ভেন্টিলেটরে দিলে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের পুরো নিয়ন্ত্রণ থাকে এই যন্ত্রটির হাতে। আর এ জন্যই চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের নিরন্তর ও তীক্ষ্ণ নজরদারি একান্ত জরুরি। কিন্তু হাসপাতালগুলোর ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটগুলো (আইসিইউ) যখন রোগীতে উপচে পড়তে থাকে, তখন সেই কাজটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ভেন্টিলেটরের গুণমান সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হওয়াটাও জরুরি।

ভেন্টিলেটর তৈরি যে জটিল বা দুঃসাধ্য, তা নয়। কিন্তু ভেন্টিলেটরের যে কোনও ডিজাইন অনুমোদনের আগে কড়া পরীক্ষায় সেটিকে পাশ করতে হয়। এই পর্বটি কখনও বেশ সময়সাপেক্ষ। বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দেশে সাড়ে ৫০০ ভেন্টিলেটর রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে মাত্র ১০টি ভেন্টিলেটর পেয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!