করোনা নমুনার অভাবে চট্টগ্রামে ল্যাব বন্ধ হওয়ার জোগাড়, তিন দিন ধরে বসে আছে সিভাসু

কিছুদিন আগেও যেখানে চট্টগ্রাম করোনার নমুনাজট ছিল ভয়াবহ পর্যায়ে, সেখানে এখন নমুনা না পাওয়ায় ল্যাবগুলোতে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত তিন দিন সিভাসু ল্যাবে করোনা কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি শুধুমাত্র নমুনা না থাকায়। সিভাসুই শুধু নয়, একইসঙ্গে অন্য ল্যাবগুলোতে কমে আসছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা।

জুনের শেষ সপ্তাহেও চট্টগ্রামের তিনটি ল্যাবেই ১৩০০ থেকে ১৫০০-এর মতো নমুনা প্রতিদিন পরীক্ষা করা হলেও একই সক্ষমতা নিয়ে গত কয়েকদিন চট্টগ্রামে পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ করে নমুনা। মানুষ টেস্ট করাতে যাচ্ছে না বলেই এমনটা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ল্যাবগুলো।

সোমবার (১৩ জুলাই) রাতে সিভাসুর ল্যাব ইনচার্জ ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত ৩ দিন আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা বন্ধ। আমাদের দুই হাজারের মত কিট আছে, লোকজনও আছে। শুধু নমুনা নেই। নমুনা না পাওয়ায় পরীক্ষা বন্ধ।’

যেখানে কিছুদিন আগেও জট কমাতে চট্টগ্রাম থেকে দুই দফায় প্রায় ৭ হাজার নমুনা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা করাতে হয়েছিল, সেখানে হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কারণ কী— এই প্রশ্নের জবাবে মানুষের টেস্ট করার আগ্রহ কমে যাওয়াকেই একমাত্র কারণ বলছেন সংশ্লিষ্টরা। উপসর্গহীন সংক্রমণ বৃদ্ধি, টেস্ট করাতে নানামুখী ভোগান্তি ও টেস্টের ক্ষেত্রে ফি নির্ধারণের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে টেস্ট করার আগ্রহ কমেছে বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে সিভিল সার্জন বলছেন সচেতনতা বৃদ্ধিও এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে।

তবে নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় ফি নির্ধারণের প্রভাব নেই দাবি করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এর কারণে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করার প্রবণতা কমেছে। কিন্তু সামর্থ্যহীনরা বিনা পয়সায় পরীক্ষা করাতে পারবেন এমন সুযোগ তো আছে। দরিদ্র, সরকারি চাকরিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজেলায় ভিজিএফ কার্ড এবং নগরীতে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যয়নপত্র দেখালেই মানুষকে বিনামূল্যে টেস্টের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’

পরীক্ষা কমার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করে সিভিল সার্জন বলেন, ‘উপসর্গ না থাকলে বিনা প্রয়োজনে নমুনা পরীক্ষা না করার বিষয়ে এখন মানুষ সচেতন হয়েছে। ফলে লক্ষণ না থাকলে কেউ পরীক্ষা করাচ্ছে না। তাছাড়া প্রকোপও কিছুটা কমেছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

রোগীদের মধ্যে করোনা টেস্টের বিষয়ে অনাগ্রহ বাড়ছে— উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার নিজেরই এই মুহূর্তে ৩ জন রোগী আছেন— যাদের সব রকমের উপসর্গ আছে। তারা উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসাও নিচ্ছেন, কিন্তু টেস্ট করাচ্ছেন না। টেস্ট করাতে বললে কেউ কেউ পরিবারে ঝামেলাও করছেন।’

তিনি বলেন, ‘রোগীদের মধ্যে করোনা টেস্টের বিষয়ে একটা অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারা উপসর্গ দেখা দিলে বাসায় বসে উপসর্গ মতো চিকিৎসা নেওয়াকেই বেছে নিচ্ছেন। বেশিরভাগই কিন্তু এটা করছে।’

উপসর্গহীন রোগী বেড়ে যাওয়াটাকে অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে উপসর্গহীন সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে কিছুদিন আগেও উপসর্গ দেখা দেওয়ায় রোগীরা যেমন টেস্ট করাতো, এখন অনেকের উপসর্গ নেই— তাই টেস্ট করাচ্ছে না। তাছাড়া সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও অনেকে টেস্টের ঝামেলায় যেতে চাচ্ছে না। কারণ টেস্টের ভোগান্তি ছাড়াও ফলাফল পাওয়া নিয়ে ৮-১০ দিন অপেক্ষায় থাকা নিয়ে মানুষের মধ্যে এর গুরুত্ব অনেকটাই কমেছে। তাছাড়া ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার একটা প্রভাবও বোধহয় পড়েছে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!