পটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনার সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করতেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই স্বাস্থ্যকর্মী। কাজের ফাঁকে হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে ছুটি চেয়েও পাননি তারা। অসুস্থতা নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজ করেছেন দুই স্বাস্থ্যকর্মী।
পরে করোনা সন্দেহে নিজেদের করোনা পরীক্ষার জন্য নিজেরাই নমুনা পাঠায় তারা। কিন্তু দুই স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা শনাক্ত না হলেও পরিবারের অন্য দুই সদস্যের গত ৯ মে করোনা পজিটিভ আসে। স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবারের সদস্য হয়েও তাদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। করোনা পজিটিভ আসার পর থেকে দুই স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবার পুরো লকডাউনে।
এর মধ্যে এক স্বাস্থ্যকর্মীর বাবা ও আরেক স্বাস্থ্যকর্মীর ছোট বাচ্চার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে- তা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে জানানোর পরও তারা কোনো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দাবি, ভুক্তভোগী স্বাস্থ্যকর্মীকে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বলার পরও তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে চেয়েছে। একইসাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় ওই স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবারকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলেও জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
ভুক্তভোগী এক স্বাস্থ্যকর্মী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুপুর থেকে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেছে। নেবুলাইজার করতে হচ্ছে। আমরা কি আইসোলেশনে নাকি লকডাউনে? আমরা স্বাস্থ্যকর্মী হয়ে লাভ কি হলো। চাকুরীর করি বলে কারো আন্তরিকতাও দেখলাম না। ঔষুধপত্র কেনার জন্য কয়েক জনের পায়ে ধরতে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন বলেছি, জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তখন তারা জানিয়েছে, পারবে না। এই আইসোলেশনের জন্য সরকার ৩ লক্ষ টাকা খরচের জন্য দিয়েছে। কিন্তু আমরাই সেই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হবে?’
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জাবেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি প্রথম দিনই তাদেরকে বলেছি, অবস্থা খারাপ এ পেশেন্টর। এখানে রাখা সম্ভব হবে না। জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে। তারাই রাজি হয়নি। আবার আমার এখানে কনসালটেন্ট নেই। জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে। শিশু কনসালটেন্টও নেই। বিশেষজ্ঞ কেউ না থাকলে করোনা পেশেন্ট আমি কিভাবে রাখবো! আমার আইসোলেশন বেড আছে চারটি। আমি তাদের রাখতে পারব যাদের কোনো উপসর্গ নেই। কিন্তু যারা পজিটিভ হয়েছে তাদের করোনা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হবে। আমি তাদের বলেছি কিন্তু তারা যেতে রাজি হয় নাই। আমি কি এখন জোর করে তাদের পাঠাবো?’
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ঘটনা আমি জানি না। শুনিও নাই। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
প্রসঙ্গত, পটিয়ায় এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট শনাক্ত হয়েছেন ২৬ জন। মৃত তিনজনের একজন ছয় বছরের প্রতিবন্ধী শিশু। গত ১২ এপ্রিল রাতে করোনা পজিটিভ আসার পর ভোররাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পর মৃত্যু হয়েছে। ১২ মে দ্বিতীয় করোনা পজিটিভ রোগী চট্টগ্রাম হতে চিকিৎসা শেষ করে বাড়িতে আসার পর রাতেই হ্দরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তার একদিন পর ১৩ মে তৃতীয় করোনা পজিটিভ রোগীও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এসআর/কেএ/এমএফও