করোনায় স্ত্রীর মৃত্যু, লাশ সাগরে ভাসিয়ে দিতে বললেন স্বামী

বেওয়ারিশ মেনে লাশ দাফন করলো আল মানাহিল

চট্টগ্রামে ফের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করতে হল করোনা আক্রান্ত এক নারীর লাশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া ওই নারীর লাশ বাড়িতে নিতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন তার স্বামী।

করোনা আক্রান্ত স্ত্রী ও মেয়েকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েই নিজের দায়িত্ব সারা স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায়। চমেকে তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে ফোন করা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর লাশ বাড়িতে নিতে রাজি নন তিনি। এমনকি স্ত্রীর লাশ কোথায় দাফন করা হবে না হবে সে বিষয়ে কথা বলতেও ইচ্ছুক নন তিনি। উল্টো তিনি বলেছিলেন, ‘দরকার পড়লে ওই লাশ সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হোক, তবু যেন আমাকে বিরক্ত করা না হয়।’

আত্মীয়স্বজনের এমন নির্মম ও অমানবিক আচরণের শিকার হওয়া সেই নারীর শেষ যাত্রায় সাথে ছিল আল মানাহিল নামে একটি সংগঠন। একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফোন করে ভদ্রমহিলার লাশ দাফনে ব্যবস্থা নিতে আল মানাহিলকে অনুরোধ করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন লাশটির দাফনের তদারকি করা হাফেজ নুরুল আবছার।

নুরুল আবছার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গতকাল (২৪ নভেম্বর) রাতে আমাদের কাছে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে কল আসে। পরিচয় না দিয়ে ফোনের ওই প্রান্ত থেকে একজন আমাদের জানান যে চট্টগ্রাম মেডিকেলে করোনায় মারা যাওয়া এক নারীর লাশ রয়েছে। যেটি দাফনে কোনো স্বজন দায়িত্ব নিতে রাজি না। কল পেয়েই আমরা চমেক হাসপাতালে যাই।’

তিনি বলেন, ‘ওই ভদ্রমহিলার সাথে শুধু তার একটা মেয়ে ছিলেন। যিনি খুব কান্নাকাটি করছিলেন। তিনিও করোনা আক্রান্ত এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি আমাদের অনুরোধ করছিলেন আমরা যেন তার মায়ের লাশের দাফন কাফনের ব্যবস্থা করি। আমাদের যেভাবে ইচ্ছে যেখানে পারি দাফন করতে বলেছিলেন তিনি। এমনও বলেছিলেন দরকার হলে আমরা যেন লাশটা সাগরে ভাসিয়ে দিই।’

‘এর কারণ হিসেবে মেয়েটি আমাদের জানিয়েছিল তার পিতাসহ স্বজনরা করোনায় মারা যাওয়া মায়ের লাশের দায়িত্ব নিতে রাজি নন। এমনকি লাশ তার গ্রামের বাড়ি মিরসরাইতে নিয়ে যেতেও নিষেধ করে দিয়েছিলেন তার পিতা’— বলছিলেন হাফেজ নুরুল আবছার।

তিনি বলেন, ‘পরে রাতে লাশটা আমরা আল মানাহিল হাসপাতালে নিয়ে আসি। সিএমপির সাথে যোগাযোগ করে আরেফিন নগরে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নিই। ভোরে আমাদের হাসপাতালে জানাজা পড়ে পরে আরেফিন নগরে লাশটা দাফন করি।’

করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া এক ভদ্রমহিলার শেষযাত্রায় শুধু সঙ্গী ছিল আল মানাহিলের স্বেচ্ছাসেবকরা।

হাফেজ নুরুল আবছার বলেন, ‘এমন মর্মন্তুদ ঘটনাগুলো তিন চার মাস আগেও আমাদের কাছে স্বাভাবিক ছিল। কিন্ত আস্তে আস্তে মানুষ বাস্তবতাকে মেনে নিতে শুরু করল। গতকাল টিম মানাহিল যেন আবারও পুরনো অভিজ্ঞতার সাক্ষী হল। এতদিন পরেও এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হবো— তা আমরা কল্পনাতেও ভাবিনি। আমি রীতিমতো কান্না করে দিয়েছি। একজন মানুষের শেষ যাত্রা এত মর্মান্তিক কেন হবে?’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!