করোনায় মারা গেলেন ভাষা সৈনিক ও প্রবীণ সাংবাদিক কামাল লোহানী

করোনার থাবায় ৮৬তে এসে থামলেন ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ স্বৈরাচার এরশার বিরোধী আন্দোলনের সামনে থাকা প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী।

শনিবার (২০ জুন) সকাল ১০টায় দিকে রাজধানী ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর মাত্র ২দিন আগে তাঁর করোনা শনাক্ত হয়।

মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফারুক আহমদ সাংবাদিক কামাল লোহানীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কামাল লোহনীর শরীরে করোনা উপসর্গ ছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনি। শনিবার সকাল ১০টায় হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

ছেলে সাগর লোহানী বলেন, আব্বুর ফুসফুস ও কিডনির সমস্যা দীর্ঘদিনের। এছাড়া তিনি হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসেও ভুগছিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) তাঁর করোনা পজেটিভ আসে। ১৭ মে থেকে তিনি হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখান থেকে পরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

দৈনিক মিল্লাত পত্রিকা দিয়ে সাংবাদিকতার শুরু করা কামাল লোহানী দৈনিক আজাদ, সংবাদ, পূর্বদেশ ও দৈনিক বার্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। চার বছর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবেও নেতৃত্ব দিয়েছেন সাংবাদিক সমাজের। তিনি ২০১৫ সালে সাংবাদিকতায় একুশে পদক লাভ করেন।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে ধারাবিবরণীর দরাজ কণ্ঠটি ছিল কামাল লোহানীর। একই কণ্ঠ বিশ্ববাসী শুনেছিল ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর কলকাতা সফর উপলক্ষে দমদম বিমানবন্দরে প্রচারিত ধারাবিবরণীতেও।

১৯৩৪ সালের ২৬ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার সনতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কামাল লোহানী। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতারের সংবাদ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ ডিসেম্বর ঢাকা বেতারের দায়িত্ব নিয়ে বিধ্বস্ত বেতারকে পুনর্গঠন করেন।
দুইবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করা কামাল লোহানী ছিলেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি, ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক।

সাংবাদিকতা ও সাংস্কৃতি জগতের পুরোধা কামাল লোহানী অসংখ্য বইয়ের লেখকও। তাঁর লেখা বইগুলো মধ্যে রয়েছে- ‘মুক্তিসংগ্রামে স্বাধীন বাংলা বেতার’, ‘রাজনীতি মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীন বাংলা বেতার’, ‘মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার’, ‘এ দেশ আমার গর্ব’, ‘আমরা হারবো না’, ‘সত্যি কথা বলতে কী’, ‘যেন ভুলে না যাই’, ‘আমাদের সংস্কৃতি ও সংগ্রাম’, ‘লড়াইয়ের গান’, ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নৃত্যশিল্পের বিস্তার’, ‘দ্রোহে প্রেমে কবিতার মত’ এবং কবিতার বই ‘শব্দের বিদ্রোহ’ইত্যাদি।

চাচাতো বোন সৈয়দা দীপ্তি রানীর সাথে যুগল কামাল লোহানী যুগলবন্দি জীবন শুরু করেন ১৯৬০ সালে। ২০০৭ সালের ২৪ নভেম্বরে তার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের সুখ-দুঃখের সাথী স্ত্রী দীপ্তি লোহানীর মৃত্যুতে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন কামাল লোহানী। এ দম্পতির এক ছেলে ও দুই মেয়ে সাগর লোহানী, বন্যা লোহানী ও ঊর্মি লোহানী।

এফএম/মুআ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!