করোনার রেডজোনে ১ নম্বর, তবু আগের ঘিঞ্জিতে ফিরে যাচ্ছে রিয়াজউদ্দিনের কাঁচাবাজার

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাণ্ড

গত এপ্রিলের শেষ দিকে চট্টগ্রামে তখনও এভাবে গেড়ে বসেনি করোনাভাইরাস। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সময়োপযোগী উদ্যোগে তখনই সংক্রমণ কমাতে নগরীর বড় বড় কাঁচাবাজারগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয় খোলা স্থানে। সংক্রমণ কমাতে এই উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে অনেকটাই। এরপর জুনের এই শুরুতেই যখন চট্টগ্রামে হু হু করে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, তখন ‘লকডাউন শিথিলের’ অজুহাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন খোলা স্থানে বসা কাঁচাবাজার সরিয়ে আগের ঘিঞ্জি জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকিকে পাত্তা না দিয়ে এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেপথ্যে অর্থকড়ির যোগসূত্রই মূল— এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেকের।

করোনার রেডজোনে ১ নম্বর, তবু আগের ঘিঞ্জিতে ফিরে যাচ্ছে রিয়াজউদ্দিনের কাঁচাবাজার 1

গত ২৪ এপ্রিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজার রিয়াজউদ্দিন বাজারটি সরানো হয় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের গাড়ি পার্কিং চত্বরে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এই বাজারের উদ্বোধন করেন। এরপর স্বাস্থ্যসুরক্ষার সব বিধি অনুসরণ করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ বাজারটির পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছিল। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একসঙ্গে ৬০০ ক্রেতা অবস্থান করার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়। বাজার ঢোকার সময় প্রত্যেককে নির্দিষ্ট ‍দূরত্ব মেনে সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করা, মুখে মাস্ক না থাকলে কাউকে ঢুকতে না দেওয়াসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষার আরও নানা ব্যবস্থা রাখা হয়। এর ফলে বাজারটি সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করে।

এদিকে চট্টগ্রামে করোনারোগীর সংখ্যা দিন দিন বিপুল গতিতে বাড়ছে, তখন ‘লকডাউন শিথিলের’ অজুহাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন খোলা স্থানে বসা এই কাঁচাবাজার সরিয়ে আগের ঘিঞ্জি জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার (৩ জুন) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিত করা হয়। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশক্রমে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়েছে— ‘সারাদেশে করোনাভাইরাসজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচাবাজারটি নির্দিষ্ট স্থান হতে রেলওয়ে স্টেশন পার্কিং স্থানে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে লকডাউন শিথিল করায় রেলওয়ে স্টেশন পার্কিং স্থান হতে রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এমতাবস্থায় রিয়াজউদ্দিন বাজার কাঁচাবাজারটি রেলওয়ে স্টেশন পার্কিং হতে বাজারের নির্ধারিত স্থানে স্থানান্তরের জন্য মাননীয় মেয়রের নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।’

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেভাবে ঘটছে, তা নিয়ন্ত্রণে আনতে যখন আবার কঠোর লকডাউনের দাবি উঠছে— ঠিক সেই সময় চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের এমন আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্টরা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এর ওপর রিয়াজউদ্দিন বাজার পড়েছে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের এক নম্বর রেডজোন কোতোয়ালীতে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই কাঁচাবাজারটি এখনই আগের সেই ঘিঞ্জি পরিবেশ ফিরিয়ে নেওয়া হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

সংকীর্ণ গলির ভেতরে রিয়াজউদ্দিন বাজারের কাঁচাবাজারটির মূল অবস্থান। ঘিঞ্জি পরিবেশে যত্রতত্র দোকানপাট ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পুরো জায়গাটিই অপ্রশস্ত। পাশাপাশি দুজন হাঁটলেও গায়ে গা লেগে যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঁচাবাজার আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া হলে এমনকি প্রশাসন শত চেষ্টা করলেও সেখানে সামাজিক দূরত্ব কোনোভাবেই নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এতে সহজেই বাড়বে সংক্রমণের ঝুঁকি। ক্রেতা-বিক্রেতা সবারই তাতে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

১২ এপ্রিল করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য হাটবাজারগুলো খোলা স্থানে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। স্থানীয় সরকার বিভাগ দেশের সব জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের এ নির্দেশনা জানিয়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!