করোনার মধ্যেই পাহাড়তলীতে জুয়ার আসর জমজমাট

করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগের মধ্যেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে জুয়ার আসরগুলো রীতিমতো জমজমাট। স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, উল্টো এমনও অভিযোগ রয়েছে প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়েই পরিচালিত হচ্ছে জুয়ার এসব আখড়া। কিশোর ও তরুণরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জুয়া আসরে বুঁদ হয়ে থাকে। সঙ্গে চলছে মাদকও।

চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর থানার সরাইপাড়া ওয়ার্ডের আব্দুল লতিফ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার একদল যুবক উৎসবের আমেজে মেতে উঠেছে জুয়া খেলায়। জুয়া খেলার নিরাপদ স্থান হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে সরাইপাড়া আব্দুল লতিফ সড়কের মতি উল্লাহ জমাদার শাহী মসজিদের ঠিক পিছনের জায়গাটিকে। অন্যদিকে পাহাড়তলী বাজার এলাকায়ও রীতিমতো প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় বসছে জুয়ার আসর।

স্থানীয় কাউন্সিলর বললেন, এদের দমাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ প্রশাসনের লোকও এতে জড়িত। তার ভাষায়, জুয়া বলেন, মাদক বলেন সবই প্রশাসনের ইশারায় হচ্ছে। টাকা দিয়ে নিচ্ছে প্রশাসনের সহযোগিতা। তবে পুলিশ বলছে, অভিযানে গিয়ে জুয়াড়ি পাওয়া যায় না। তবে অনেকেই আড্ডা দেয়, গুটি খেলে।

সরাইপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, জুয়ার আসরগুলোতে অংশ নেওয়া বড় একটি অংশই যুবক-কিশোর। বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে চলে জুয়া খেলা। জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে আবার চলছে মাদক সেবনও। সকাল হলেই ওই জায়গায় জুয়াড়িরা জড়ো হতে থাকে। পরে আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে রাত পর্যন্ত চলে এই জুয়া। মাঝে মাঝে টাকা লেনদেন নিয়ে হাঙ্গামা হয়। নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে গড়ায় মারামারি পর্যন্তও। আবার এই খেলা দেখতে চারপাশ ঘিরে ধরে তরুণ-কিশোররা। এতেও থেকে যাচ্ছে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি। স্থানীয়রা এমন কর্মকাণ্ডে বারণ করতে গেলে তেড়ে আসে তাদের ওপর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক লোক জানান, ‘দীর্ঘ দিন ধরে তারা জুয়া খেলছে। ডেইলি হাজার হাজার টাকার জুয়া চলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। কেউ তাদের নিষেধ করতে পারে না। কেউ বললে তাকে মারতে আসে ছেলেগুলো। তাই কেউ কিছু বলেও না।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর সাবের আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পাহাড়তলী বাজার এরিয়ায় জুয়ার আসর বন্ধ করতে আমি অনেক পদক্ষেপ নিয়েছি। এদের বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধ করেছি। বিভিন্ন মিটিং-মিছিল করেছি। কোনো ফল মেলেনি। আমি ব্যর্থ। প্রশাসনের ইশারায় এসব করছে। প্রশাসনকে টাকা দিয়ে ১০০ পার্সেন্ট সহযোগিতা নিচ্ছে এসব জুয়াড়ি।’

পাহাড়তলী থানার মাসুদ নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এই কাউন্সিলর বলেন, ‘এই সবকিছু ওর কাজ।’

আব্দুল লতিফ সড়কের পিছনে জুয়া খেলা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই বললেও একপর্যায়ে কাউন্সিলর বলেন, ‘স্থানীয় কিছু ছেলেপেলে খালি মাঠে ওখানে জুয়া খেলে। টুকটাক ট্যাবলেট বিক্রি চলতেছে। প্রশাসন অনেক দৌড়িয়েছে। আমিও অনেক দৌড়িয়েছি। কিন্তু প্রশাসন থেকে ওরা সহযোগী পাওয়ায় আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।’

এ বিষয়ে পাহাড়তলী থানার ওসি মইনুর রহমান বলেন, ‘এই ধরনের কিছু নাই। জুয়ার খবর শুনে গিয়ে দেখি গুটি খেলে। খবর পেয়ে গত পরশু দিন আমরা অভিযান চালিয়েও এই ধরনের কিছু পাইনি। আমরা পেয়েছি বসে-বসে আড্ডা মারছে। এইটুকু খবর পেয়েছি আমি।’

এমআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!