করোনার ভ্যাকসিন, তৃতীয় ধাপে তিনটি প্রতিষ্ঠান

মহামারী করোনাভাইরাসের আক্রমণে নাকাল পুরো বিশ্ব। সারা বিশ্বে দেড় কোটিরও বেশি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ লাখের বেশি মানুষের। বিশ্ববাসী এখন নির্বাক তাকিয়ে আছে প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধক ভ্যাকসিনের দিকে। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যমতে, সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কারে এগিয়ে আছে তিনটি প্রতিষ্ঠান, যারা ইতোমধ্যে তৃতীয় ধাপে উন্নীত হয়েছে। এদের মধ্যে একটি হল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। আর অপর দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিনোভেক এবং ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন বা মারডকচিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট।

জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করতে ১৭৩টি উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এরমধ্যে ১৪০টি এখনও মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হয়নি। একে বলা হয় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। বিজ্ঞানীরা এখনও এসব টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন, পশু বা প্রাণীর দেহে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা যাচাই করছেন। ১৯টি টিকার কার্যক্রম রয়েছে প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল টেস্টিং শুরু হয়েছে। এর ফলে মানুষের ছোট একটি গ্রুপের ওপর টিকাটি প্রয়োগ করে দেখা হয় যে, এটা নিরাপদ কিনা। সেই সঙ্গে এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় কতটা প্রভাব ফেলে, তাও যাচাই করা হয়।

১১টি টিকা রয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে, যেখানে এসব টিকা কতটা নিরাপদ, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এই পর্যায়ে কয়েকশো মানুষের ওপর টিকার পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এর নিরাপত্তা আর সঠিক মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করেন।

তৃতীয় ধাপে কয়েক হাজার মানুষের ওপর টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, সেটা কতটা নিরাপদ, কতটা কার্যকর, বড় ধরনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয় কিনা। এখানে সফলতা পেলেই সাধারণত টিকার অনুমোদন হয়ে থাকে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা তৃতীয় কোন দেশে করতে হয়।

জাতিসংঘ বলছে, করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায় যে তিনটি প্রতিষ্ঠান তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে সেগুলো হচ্ছে-

সিনোভেক

কোভিড-১৯ এর নিষ্ক্রিয় অংশের ওপর ভিত্তি করে একটি টিকা আবিষ্কারের কাজ করছে চীনের কোম্পানি সিনোভেক। প্রথম দফার পরীক্ষাগুলোয় এই টিকাটি বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এখন ব্রাজিল ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েক হাজার মানুষের দেহে টিকাটির তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি

শিম্পাঞ্জির শরীরের সাধারণ সর্দিকাশি তৈরি করে, এমন একটি ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন করে এই টিকাটি তৈরি করা হচ্ছে। টিকাটি করোনাভাইরাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং তখন শরীরের ভেতর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বুঝতে পারে যে, কীভাবে করোনাভাইরাসকে আক্রমণ করে পরাস্ত করা যাবে।

সম্প্রতি এর গবেষকরা ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করেছে। ভারতেও টিকাটির ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন নিরাপদ এবং মানুষের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জীবিত করতে পারে বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন/মারডকচিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট

প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি ফুসফুসের টিকা নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। এই টিকা যদিও সরাসরি কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা করে না; কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!