করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে নিচ্ছে চট্টগ্রাম, ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ নিয়ে শঙ্কা এবার

সামনের একমাসই এখন মাথাব্যথা

চট্টগ্রামে খানিকটা কমেছে করোনার রাহুগ্রাস। পজিটিভ শনাক্তের হার কমার সাথে সাথে কমছে জটিল উপসর্গে ভোগা রোগীর সংখ্যাও। করোনা চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামে করোনার ‘প্রথম ঢেউ’ (ফার্স্ট ওয়েভ) শেষ হতে চলেছে। তবে তিন মাস পর ‘প্রথম ঢেউ’য়ের ধাক্কা চট্টগ্রাম অনেকটাই সামলে নিলেও করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ (সেকেন্ড ওয়েভ) নিয়ে শঙ্কার কথাও বলছেন তারা।

‘দ্বিতীয় ঢেউ’ (সেকেন্ড ওয়েভ) বলতে বোঝানো হয়, প্রথম দফায় সংক্রমণের পরে আবার নতুন করে জনগোষ্ঠীর আরেক অংশে রোগের সংক্রমণ শুরু হওয়া। অতীতের মহামারিগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেগুলো কয়েকমাস জুড়ে কয়েক দফায় ঘুরেফিরে আঘাত হেনেছে আবার। এর আগে দেখা গেছে, সংক্রমণের প্রথম ঢেউ থেকে দ্বিতীয় ঢেউ আরও প্রাণঘাতী হয়ে থাকে। ভয়টা এখন এই জায়গাতেই।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় এই ঢেউকে ঠেকাতে পারে একমাত্র জনসচেতনতা। সচেতনতার প্রতি অনেক বেশি জোর দিতে হবে এখন থেকেই। নইলে করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আবার তছনছ করে দিতে পারে চট্টগ্রামকে। এক্ষেত্রে আগামী এক মাস সময়টাকে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে এই সময়ে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থার পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতনতা বাড়ানোর ওপরই জোর দিচ্ছেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্টরা।

মাসখানেক আগেও যেখানে হাসপাতালে একটি শয্যার জন্য চরম হাহাকার ছিল, সেখানে এখন চট্টগ্রামে বিভিন্ন হাসপাতালে কোভিড ডেডিকেটেড ১৯টি আইসিইউসহ ৪০০ টি শয্যা খালি থাকার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। পাশাপাশি গত বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা টেস্টের ক্ষেত্রে মোট নমুনা পরীক্ষায় কেবল ২০ শতাংশ হারে পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী। যেখানে ১০ দিন আগেও এই হার ছিল ৩০ শতাংশের মতো।

চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির এই পরিবর্তনকে কিভাবে দেখছেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিভাসু ল্যাবের ইনচার্জ ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির দৃশ্যমান একটা পজিটিভ চেঞ্জ হচ্ছে— সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে বলে এটি হচ্ছে— এমনটা ধারণা করছি আমরা। প্রথম দিকে মানুষ সেভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও এখন মোটামুটি মানছে। ধারণা করছি, আমাদের এখানে করোনার প্রথম ওয়েভটা শেষ হচ্ছে।’

তবে এক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর দিকে আরও বেশি জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গাতেই সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে, যা প্রথম ওয়েভের চেয়ে ভয়াবহ ছিল। কাজেই আমাদের একদম আত্মতুষ্টিতে ভোগার সুযোগ নেই। বরং সেকেন্ড ওয়েভ যাতে না আসে সেজন্য সচেতনতার দিকে অনেক বেশি জোর দিতে হবে আমাদের।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক আদনান মান্নান করোনার জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে একটি গবেষণা করছেন। চট্টগ্রামে করোনা পরিস্থিতির এই পরিবর্তনের পিছনে এর জিনগত বিন্যাসে পরিবর্তনের একটা প্রভাব থাকতে পারে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক যে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে। তবে এখন যাদের পজিটিভ হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে উপসর্গহীন রোগী রয়েছে। ফলে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি কিন্তু অনেক বেড়ে যাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন দিক থেকে অনেক তথ্য পাচ্ছি এই বিষয়ে যে, পজিটিভ শনাক্ত হওয়া অনেকের কোন উপসর্গ নেই। এটাকে স্বস্তিকর মনে করার কোনো কারণ নেই। এটা বরং আরও বেশি ঝুঁকির। কারণ উপসর্গ দেখা গেলে মানুষ আইসোলেশনে যেতো, টেস্ট করতো। এখন অনেকে হয়তো টেস্ট করাচ্ছে না। এতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে আরও বেশি। এক্ষেত্রে প্রথম দিকে হয়তো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। তবে এমনও হতে পারে যে দেরিতে হঠাৎ করেই জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে। আমরা ধারণা করছি এখানে জিনগত পরিবর্তনের একটা প্রভাব আছে। এক্ষেত্রে উপসর্গহীন রোগী ও আগের জটিল উপসর্গের রোগীদের জিন নিয়ে গবেষণা করলে বিষয়টি নিশ্চিতভাবে বলা যাবে। সরকারের দায়িত্বশীলদের এই বিষয়ে ভাবা উচিত।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ফার্স্ট ওয়েভের যে রুদ্ররূপ ছিল তা নিম্নমুখী। তবে আমাদের সন্তুষ্টির সুযোগ নেই। সেকেন্ড ওয়েভ এড়ানোর জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। কিন্তু সামনের সময়টা এক্ষেত্রে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। সামনে কোরবানের ঈদ আসছে। গরুর হাটের একটা বিষয় আছে, কোরবানির মাংস বিলি-বন্টনেও ঝুঁকি থেকে যাবে। এসব ক্ষেত্রে সবাই সহযোগিতা করলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে হয়তো সেকেন্ড ওয়েভের ধাক্কাটা এড়ানো যাবে। আমরা এখন সেই বিষয়ে বেশি জোর দিচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!