করোনার ঝুঁকি নিয়ে চট্টগ্রামে সাড়ে ১৫ হাজার নির্বাচন কর্মকর্তার ‘এলাহী’ প্রশিক্ষণ!

করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেখানে ১০ জনের বেশি লোকের সমাগম নিষিদ্ধ করেছে, সেখানে ‘অতি ঝুঁকিপূর্ণ’ চট্টগ্রামে সাড়ে ১৫ হাজার নির্বাচনী কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার এলাহী আয়োজন শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার (২০ মার্চ) প্রথম দিনেই তিন হাজার কর্মকর্তার জমায়েত করেছে নির্বাচন কমিশন। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় সরকার নির্দেশিত নিয়ম ভঙ্গ করে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসাররা। দেশের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের এই কাণ্ডজ্ঞানহীন পদক্ষেপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষক, ব্যাংকারসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।

গত ১৫ মার্চ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের নিয়োগ করে প্রত্যেকের কাছে চিঠি পাঠান নির্বাচন কমিশনের চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান। ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োগপ্রাপ্ত মোট ১৫ হাজার ৩৯১ জন কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিদিন ৩ হাজার কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন ভেন্যুতে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই ঝুঁকির মধ্যে প্রশিক্ষণের জন্য জমায়েতের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচনে ডাক পাওয়া কর্মকর্তারা। সরকার যেখানে ৫ জনের বেশি মানুষের জমায়েতে নিরুৎসাহিত করছে, এমনকি খোদ নির্বাচন কমিশনই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ৫ জনের বেশি মানুষকে সাথে আনা যাবে না বলে কড়াকড়ি আরোপ করেছিল, সেই নির্বাচন কমিশনই কয়েক হাজার কর্মকর্তা নিয়ে নির্বাচনী প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। এমন ঘটনায় বিস্মিত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল। করোনাভাইরাসের সতর্কতাবিধি ভঙ্গ করে প্রশিক্ষণ সমাবেশ অযৌক্তিক বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই। এতে ওই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে দায় নির্বাচন কমিশন নেবে কিনা— এই প্রশ্নও ওঠেছে।

প্রশিক্ষণের পর আছে মক ভোটিং। এটি অনেকটা নির্বাচনের আদলেই হয়। সব নির্বাচন কর্মকর্তাকেই এদিন নিজ নিজ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে হয়। আগ্রহী ভোটারদের ইভিএমে ভোটগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটিই সারা দিন দেখাতে হয়।

এবারের চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মোট ১৫ হাজার ৩৯১ জন কর্মকর্তা ভোটগ্রহণের দায়িত্বে থাকবেন। এর মধ্যে ৭৩৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪ হাজার ৮৮৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং এবং ৯ হাজার ৭৭২ জন পোলিং অফিসার।

নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সরকারী মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার যেখানে ৫ জনের বেশি সমাগম হতে নিষেধ করেছেন, সেখানে এতো লোকের মধ্যে প্রশিক্ষণ কিভাবে নেবো? এতে করোনাভাইরাস ছড়ালে সেই দায়ভার কি নির্বাচন কমিশন নেবে? এই ভাইরাসকে নিয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই। যদি এটির চিকিৎসা থাকতো তাহলে আমরা মেনে নিতাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানিও না আমাকে প্রিজাইডিং হিসেবে রাখা হয়েছে। কারণ আমি চিঠি পাইনি। এমনিতেই আতঙ্কে আছি। তার ওপর কেন জেনেশুনে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়বো।’

সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব থাকা চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের প্রভাষক মাহবুবুল আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা তো আতঙ্কগ্রস্থ। কিন্তু বাধ্য হয়ে এর মধ্যে সিটি নির্বাচনের প্রশিক্ষণে যেতে হচ্ছে। অসহায়ের মতো সরকারি সিদ্ধান্তকে মানতে হচ্ছে। যদিও স্কুল-কলেজ বন্ধ, জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা, এমনকি বিয়ে অনুষ্ঠান পর্যন্ত সরকার বন্ধ করেছে। এর মধ্যে নির্বাচন কেন এতো জরুরি হল আমাদের বুঝে আসছে না।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এবং চসিক নির্বাচনের রির্টানিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘যেসব অফিসার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের প্রশিক্ষণের জন্য তালিকা তৈরি হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য ৯টি ভেন্যুও ঠিক করা হয়েছে।’

করোনাভাইরাস রোধে সরকারঘোষিত নিয়ম ভঙ্গ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কিছু করার নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আমাকে নির্বাচনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হয়েছে। এখানে এক রুমে ২৫ থেকে ৩০ জন বসে প্রশিক্ষণ নেবেন। শুক্রবার একদিনে প্রশিক্ষণ নেবেন ৩ হাজার কর্মকর্তা।’

যে সব কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে চট্টগ্রামের কুলগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, সিডিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পাহাড়তলী বালিকা বিদ্যালয়, ডা. খাস্তগীর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শাহ ওয়ালিউল্লাহ স্কুল, কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খাজা আজমেরী উচ্চ বিদ্যালয়, আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি স্কুল (বালিকা শাখা)।

নির্বাচনে ৭ মেয়র প্রার্থী এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৬১ প্রার্থী এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৫৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৭৩৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ১৯ লাখ ৫১ হাজার ৫২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭২৩ জন পুরুষ এবং ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩২৯ জন নারী ভোটার রয়েছেন।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!