করোনার ছোবলে লক্ষ্যও ছুঁতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস

রাজস্ব আদায়ে এ বছর লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস। ২০১৯-২০২০ অর্থ-বছরের শেষের ৩ মাস করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ভয়াবহ ধস নামে আমদানি আয়ে। এই অর্থবছরের বাকি ৯ মাসেও প্রবৃদ্ধি ছিল কমতির দিকে। কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রার এই অধপতনের প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতেও। করোনা মহামারির কারণে এমনিতেই বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানো হয়েছে, কিন্তু ওই কমিয়ে আনা লক্ষ্যও ছুঁতে পারেনি কাস্টমস।

রাজস্ব আদায়ের এ কমতি শুধু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেই নয়, আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরেও এমন পরিস্থিতিই থাকবে বলে ধারণা করছেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা। যদিও করোনার কারণে অর্থবছরের শেষের তিন মাস কাস্টমসের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে কমানো হয়েছে। কিন্তু তাতেও এপ্রিল, মে ও জুন— এই তিন মাসের আলাদা লক্ষ্যেও পৌঁছতে পারেনি কাস্টমস হাউস। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চলতি অর্থবছরে প্রথম ১২ মাসের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে এরকম ধস আর কখনও দেখেনি কেউ।

কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, সরকার করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাস্টমস হাউস চালু রাখা হয়। এ সময়ের মধ্যে প্রায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। অনেক পণ্যের আমদানি কমে যায়। অনেক আমদানিকারক পণ্য ছাড় করেননি। এর বাইরে করোনায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যেও বড় প্রভাব পড়েছে।

তিনি জানান, কাস্টমসে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী। চট্টগ্রামের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা মারাও গেছেন।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬৩ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। পরে এ লক্ষ্যমাত্রাকে সংশোধন করে কমিয়ে ধরা হয় ৫৮ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। অথচ আগের হিসাবে জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসের রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৫৮ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

সংশোধিত হিসাবে ওই ১১ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা। কিন্তু এ ১১ মাসে আদায় হয়েছে ৩৭ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা যা সংশোধিত হিসাব অনুযায়ীও ১৬ হাজার ১২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ জুনে মাসেও প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে পারেনি চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস।

এদিকে জুন মাসে সংশোধিত লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। সেখানেও ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় হবে না বলে ধারণা করছেন কাস্টমসের কর্মকর্তারা। গত বছরের জুন মাসে আদায় হয়েছিল ৩ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। এদিকে ২০২০ সালের জুন মাসের ১৫ দিনে আদায় হয়েছে ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘অধিক শুল্কের পণ্যে আমাদানি কম হয়েছে। এছাড়া করোনার কারণে রাজস্ব আদায়েও প্রভাব পড়ছে। কাস্টমস হাউসে আতঙ্কের মধ্যেও আমরা সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছি। লক্ষ্যমাত্রা আদায় বড় কথা নয়, যথাযথভাবে কাজ করে যাওয়াই হচ্ছে বড় বিষয়।’

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!