‘হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে/ মন বাড়িয়ে ছুঁই/ দুইকে আমি এক করি না/ এককে করি দুই/ হেমের মাঝে শুই না যবে/ প্রেমের মাঝে শুই/ তুই কেমন করে যাবি?/ পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া/ আমাকে তুই পাবি’— কবি নির্মলেন্দু গুণ এমনই নিখাদ উচ্চারণে জানিয়েছেন ভালোবাসার সুখানুভূতির কথা। প্রতীক্ষার ছায়া হয়ে থাকা আর তাকে মন দিয়ে ছুঁয়ে দেওয়ার নামই তো ভালোবাসা। প্রখর রোদে হিমেল হাওয়ায় শীতল হওয়ার নামই ভালোবাসা। আজ রোববার সেই অনন্য অনুভূতিকে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ পালন করার দিন। আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ভ্যালেনটাইনস ডে।
চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে প্রায় তিন দশক ধরে এ দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এবারও নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান।
তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশও ভালোবাসার উৎসবে মুখর আজ। এসএমএস, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে বিন্দু বিন্দু কথামালা সম্মুখে দাঁড়িয়ে পরিণত হবে ভালোবাসার কথামালার সিন্ধুতে। নীল খামে হালকা লিপস্টিকের দাগ, একটা গোলাপ ফুল, চকোলেট-ক্যান্ডি, ছোট্ট চিরকুট আর তাতে দুই ছত্র পদ্য হয়ে উঠতে পারে আজকের দিনের উপহার। আর ফুল তো রয়েছেই, রক্তরাঙা গোলাপ! তবে ভালোবাসার দিনটি শুধুই প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য নয়। মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, ভাইবোন, প্রিয় সন্তান, এমনকি বন্ধুর জন্যও ভালোবাসার জয়গানে আপ্লুত পারে সবাই।
ইতিহাসবিদদের মতে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন।
যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ভ্যালেনটাইনস ডে সর্বজনীন হয়ে ওঠে আরও পরে প্রায় ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাওয়ার পেছনে রয়েছে আরও একটি কারণ। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মৃত্যুর আগে প্রতি বছর রোমানরা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালন করত ‘জুনো’ উৎসব। রোমান পুরাণের বিয়ে ও সন্তানের দেবী জুনোর নামানুসারে এর নামকরণ। এ দিন অবিবাহিত তরুণরা কাগজে নাম লিখে লটারির মাধ্যমে তার নাচের সঙ্গীকে বেছে নিত। ৪০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে রোমানরা যখন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীতে পরিণত হয় তখন ‘জুনো’ উৎসব আর সেন্ট ভ্যালেনটাইনের আত্মত্যাগের দিনটিকে একই সূত্রে গেঁথে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হিসেবে উদযাপন শুরু হয়। কালক্রমে এটি সমগ্র ইউরোপ এবং ইউরোপ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে ভালোবাসা বাজারে আঘাত হানতে না পারলেও চট্টগ্রামে ফুলের বাজারে আঘাত হেনেছে করোনা। এবার সেভাবে ফুলের বেচাকেনা নেই।
খবর নিয়ে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে ফুলের বাজারে অস্বাভাবিক মূল্যহ্রাস। সাথে কম ফুলের চাহিদায় কপালে হাত দিচ্ছে ফুলের দোকানিরা। ফুলের বাজার খ্যাত চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগীর মোড়ে ফুলের দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ১০০ গোলাপ গত বছর যেখানে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই গোলাপ এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়। অন্যদিকে পিংক কালার রজনীগন্ধা স্টিকের প্রতি শতকের দাম গত বছর ছিলো ১২০০ টাকা, সেই ফুলের দাম এখন ৭০০ টাকা।
ফুলের দাম কম হওয়াটা প্রেমিকযুগলের মুখে হাসির কারণ হলেও কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে ফুল ব্যবসায়ীদের। স্টার পুষ্পবিতানের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ সালাম বলেন, ‘এ বছর ফুলের চাহিদা ও দাম কম, অন্যান্য বছর ১৩ ফেব্রুয়ারি ফুল বিক্রি করতে করতে আমাদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকে না। সেখানে এ বছর আমরা অনেকটা বেকার সময় কাটাচ্ছি।’
একই ধরনের মন্তব্য করে অপরাজিতা পুষ্পবিতানের মালিক মো. কুতুব উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা আমাদের ব্যবসা লাটে তুলে দিয়েছে। আমাদের ব্যবসার জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি খুব ভালো দিন, এ দিনে ফুলের চাহিদা বছরের অন্যান্য দিনের থেকে অনেক বেশি থাকে। কিন্তু করোনার জন্য সব শেষ।’
সিপি/বিএস