করোনার কষ্টে মিরসরাইয়ের নিম্ন আয়ের লোকজন

দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। সারাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের জনসমাগম নিষেধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং ও বিপণিবিতানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া আগামী ১০ দিন রাস্তাঘাটে মানুষকে বের না হওয়ার জন্য সতর্ক করছে পুলিশ প্রশাসন। এছাড়া বিভিন্ন গ্রাম-অঞ্চলে গিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। গত তিনদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যানবাহন, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ভ্যান ও মোটরসাইকেল চলাচল একদম কমে গেছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটেখাওয়া মানুষ। আয় রোজগারের কোনো পথ না থাকায় পেটের দায়ে তারা ঘরে থাকতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। ভাড়ার জন্য সকাল থেকে বসে আছেন সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ও রিক্সা চালকেরা।

এদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সচেতনতার জন্য মাস্ক, জীবাণুনাশক স্যানিটাইজার, সাবান ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করছে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগসহ সামাজিক সংগঠনগুলো।

শনিবার (২৮ মার্চ) কথা হয় রিক্সাচালক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৪ জন। আজ সকাল ৯টায় রিক্সা নিয়ে বের হলাম এখন ৩টা বেজে গেছে, মাত্র ৭০ টাকা ভাড়া পেলাম। আগে এতঠুকু সময়ের মধ্যে ৪/৫০০ টাকা হয়ে যেত। অবস্থা খুবই খারাপ। করোনার কারণে মানুষ বাড়ি থেকে তেমন বের হচ্ছে না। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাধ্য হয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি।’

ব্যাটারিচালিত রিক্সার চালক মো. সেকান্দার হোসেন বলেন, ‘পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই। আগে ৭ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার করতাম। এখন করোনা আতঙ্কে কেউ ঘর থেকে বের হয় না। আমার মতো আরও অনেকে আছে যারা সারাদিন বসে আছে। এখনো ১০০ টাকা আয় করতে পারিনি। কীভাবে সংসার চলবে। মালিকের ইনকাম কি করে দিব তাও বুঝতেছি না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। সরকার যদি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা করতো তাহলে কিছুটা রক্ষা হতো।’

সিএনজিচালিত অটোরিক্সা চালক মো. সবুজ বলেন, ‘আমার পরিবারে আমার স্ত্রী, মা ও ছেলে সন্তান মিলে ৫ জনের সদস্য রয়েছে। তার মধ্যে করোনার কারণে গত ৬দিন ধরে সিএনজি বন্ধ রয়েছে। আয় রোজগার নেই। কেমন করে চলবে সংসার। আজকে পার্শ্ববর্তী একজন থেকে ১০০০ টাকা ঋণ নিয়ে বাজার করছি। কিন্তু এইভাবে আর কতদিন চলবে। গত দুইদিন মিরসরাই পৌরসভা থেকে ঘুরে আসলাম এখনো কিছু পাইনি। উনারা বলছে আসলে দেবেন।’

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাস্তায় অনেক সিএনজি ও রিক্সা চলাচল করছে। কিন্তু যাদের আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে এ রকম পেলে আমাদের খবর দিবেন। আমরা তাদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে আসবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘মিরসরাই দুই পৌরসভা ও ১৬ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নিয়ে অসহায়দের তালিকা করেছি। খুব শীঘ্রই তাদেরকে আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার দিয়ে আসবো।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!