করোনার উপসর্গ নিয়েও কাজ, আড়াই লাখ পোশাককর্মীর সঙ্গে ঝুঁকিতে পুরো চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে প্রতিদিনই নতুন করে করোনাভাইরাস পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে। গত কয়েকদিনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্ত হয়েছে অন্তত ১৫ জন। শ্রমিকরা জ্বর নিয়ে কাজ করতে গিয়েই শনাক্ত হয়েছেন করোনা পজিটিভ। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি ও তার পরিবারের সদস্যকে লকডাউন ও আইসোলেশনের আওতায় আনা হলেও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা কারখানার অন্য শ্রমিকদের আইসোলেশনে রাখবার ‌‘ধার ধারে না’ এসব প্রতিষ্ঠান। করোনার ঝুঁকিকে এমনই তাচ্ছিল্য দেখাচ্ছে কারখানাগুলো। ‘করোনায় আক্রান্ত হলেও কাজ করতে হবে’— এভাবে ভেবে নিয়েই চরম ঝুঁকিতে কারখানায় যাচ্ছেন চট্টগ্রামের আড়াই লাখ শ্রমিক।

সিইপিজেডে মোট প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৫৭টি। তবে সেখানে সচল রয়েছে ১৪৮টি। সেখানে কাজ করছেন প্রায় ২ লাখ পোশাক শ্রমিক। এছাড়াও কর্ণফুলী ইপিজেডেও রয়েছে প্রায় ৫০টি গার্মেন্টস। সেখানেও কাজ করছেন প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক।

চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা এখন উর্ধ্বগামী। বাড়ছে মৃত্যুও। উপসর্গ নিয়েও কাজ করছে অনেক শ্রমিক। এসব কারখানায় আক্রান্ত হওয়া শ্রমিকদের মাধ্যমে পুরো নগরীতে করোনা পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন তারা।

শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হলেও সবাইকে জোর করে কাজ করানো হচ্ছে— এমন অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেডের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। সিইপিজেডের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে জ্বরের মতো করোনার উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কর্মস্থলে কাজ করতে হচ্ছে শ্রমিকদের। কারখানার মেডিকেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ‘অসুস্থ’ প্রমাণ হলে কেবল ২-৩ দিনের ছুটির দেওয়া হয়। এরপর সুস্থ না হলেও ছুটি শেষে তাকে পুনরায় কাজ করতে হচ্ছে। পরে কর্মস্থলে থাকা অবস্থায়ই নমুনা পরীক্ষায় আসে করোনা পজিটিভ!

এমনই একজন হলেন মো. নাছির (৩৩)। তিনি সিইপিজেডের কর্ণফুলী স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেডে সুপারভাইজার পদে কাজ করেন। তিনি ইপিজেড থানার আমির হামজা সওদাগরের বাড়ির মৃত সিরাজুল হকের ছেলে।

এছাড়াও গত কয়েকদিনে করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়া পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন জীবী বাংলাদেশ লিমিটেডের মোর্শেদ আলম (২৫) ও মঞ্জুর আলম (২৩), এইচ কে ডি ইন্টারন্যাশনালের মো. বেলাল (৩৫), কেনপার্ক বাংলাদেশ অ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেডের সেলিনা (৩৭) ও দেবদাস (২৬), এনজেড টেক্সটাইল লিমিটেডের মো. রাজু মিয়া (২৩)। এরা সবাই নগরীর ইপিজেড থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

করোনা পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হওয়া নগরের পতেঙ্গা থানার খেজুরতলার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন পাউলো গার্মেন্টসের পোশাক শ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম (২৭)। স্টিল মিলস পুরাতন পোস্ট অফিস গলির একটি বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকেন জীবী বাংলাদেশ লিমিটেডের মেডিকেল নার্স আরজিনা আক্তার (৩০)।

শনিবার (১৬ মে) সন্ধ্যায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে পালাতে গিয়ে নগরীর ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট এলাকায় সড়কেই মারা গেছেন সিইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় কর্মী নুপুর। ওই পোশাককর্মীর বাসা নগরীর ইপিজেড থানার ফ্রিপোর্ট এলাকায়। শুক্রবার (১৫ মে) তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্ণফুলী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মসিউদ্দিন বিন-মেজবাহ বলেন, ‘গত ১৩ তারিখে নজরুল ইসলাম ও নার্স আরজিনা আক্তারের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ায় ওই ফ্লোরে বেশ কয়েকজনকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। তবে নতুন করে আরও কয়েকজনের খবর পেয়েছি। সেগুলো খবর নিয়ে তাদেরকেও আইসোলেশনে পাঠানো হবে। এখানকার কোন ফ্যাক্টরি যদি আইসোলেশনে পাঠানোর বিষয়টি না মানে, ওই কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল সিইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার খুরশিদ আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। সবার কাছে মেসেজ দেওয়া হয়েছে কোন প্রতিষ্ঠান যদি শ্রমিকদের অসুস্থতা নিয়ে কাজ করায় সেটি যেন আমাদের তাৎক্ষণিক জানায়। সাথে সাথে জানলে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহজ হয়। তারপরও এ বিষয়ে আমি খোঁজ খবর নিচ্ছি।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!