‘করোনাযুদ্ধে নব্য রাজাকারের ভূমিকায় বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা’

চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবার দাবিতে আন্দোলনে নামবেন মুক্তিযোদ্ধারাও

করোনা পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের ভূমিকা নিয়ে এবার সমালোচনায় মুখর হলেন মুক্তিযোদ্ধারাও। বৈশ্বিক মহামারী করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাসপাতাল মালিকরা নব্য রাজাকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। এর আগে হাসপাতাল মালিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া সাবেক ছাত্রনেতাদের সাথে সংহতি জানিয়ে আজকের (বুধবারের) মধ্যে তাদের সাথে বৈঠক করে এই বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের কথাও জানিয়েছেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরষিদের মহাসচিব ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও করোনা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ নিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সবাই যার যার অবস্থান থেকে এই যুদ্ধে এগিয়ে আসছে। কিন্তু আমরা গভীর দুঃখের সাথে লক্ষ্য করলাম চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের ভূমিকা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা থাকার পরেও তারা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে না। চিকিৎসা না পেয়ে অনেক রোগীর মৃত্যুর খবর আমরা পাচ্ছি। আবার এই চিকিৎসা না দেওয়ার সপক্ষে অনেকে নির্বিকারভাবে প্রকাশ্যে কথাও বলছে। বেসরকারি হাসপাতাল মালিক ও তাদের পক্ষে কথা বলা এসব লোকদের ভূমিকা করোনাবিরোধী যুদ্ধে রাজাকারের ভূমিকা বলেই আমরা মনে করি। তারা করোনার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা করা যুদ্ধে চরম অসহযোগিতা করছে।’

একটি মহল খুব কৌশলে চিকিৎসা না দিয়ে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের চিকিৎসা না দিয়ে একটি মহল কৌশলে তাদের সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেয়ার অশুভ চক্রান্ত করছে। একজন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুপস্থিতিতে এই ধরনের হঠকারী অবস্থান নেয়ার সুযোগ পেয়েছে তারা।’

কিন্তু তাদের এই ষড়যন্ত্র ও নির্বিকার ঔদ্ধত্যকে আর বরদাশত করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের এভাবে চিকিৎসাহীন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার এই অশুভ খেলা বেশি দিন বরদাশত করা হবে না। আমরা দেখেছি চট্টগ্রামের সাবেক ছাত্রনেতারা বেসরকারি হাসপাতালের এই অরাজকতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে। তাদের এই আন্দোলনের সাথে আমরা চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারাও একাত্মতা প্রকাশ করছি।’

আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালে নাগরিকদের চিকিৎসা দেয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি রেখে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের ৪৮ ঘন্টা সময় বেধে দিচ্ছি। এর মধ্যে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন ঘোষণা না পেলে আর বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের অবস্থান থেকে নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া শুরু না করলে আমরা ওসব হাসপাতালগুলো লকডাউন করে দেবো। হাসপাতালগুলোতে লাল পতাকা লাগিয়ে দেবো। যেসব হাসপাতালে নাগরিকদের চিকিৎসা মিলবে না সেসব হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এর বিরুদ্ধে রাজপথের পাশাপাশি আদালতেও আইনি লড়াইয়ে যাবো আমরা।’

তিনি বলেন, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করা সহযোদ্ধাদের অনেকের সাথেই আমার কথা হয়েছে। আমরা সকলেই এই বিষয়ে একমত হয়েছি যে বেসরকারি হাসপাতালগুলো এ অমানবিকতার নজির স্থাপন করছে সেই অবস্থান থেকে তারা সরে না আসলে চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতাকে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনিভাবে ও রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো আমরা।’

মুক্তিযোদ্ধা ইউনুসের সাথে একমত পোষণ করা অন্য বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন আবুল মনসুর, মহিউদ্দিন হাসেম, জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ মন্টু, মোহাম্মদ ইউসুফ, নৌ কমান্ডো মোহাম্মদ হোসেন, মহিউদ্দিন, আবুল কাশেম, কমান্ডার মাহবুব, অমল মিত্র, কমান্ডার জামাল, হারিস আহমদ, আবু সৈয়দ, আনোয়ারুল আজিম, মো. মহসীন কমান্ডার,আরিফ মাসুদ, দেবাশীষ গুহ, মো. ইদ্রিস, কাজী আবু তৈয়ব, কমান্ডার কাজী সিরাজ, রফিক প্রমুখ।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!