করোনাযুদ্ধে আইসোলেশনের উদ্যোক্তারাই ‘বড় মুক্তিযোদ্ধা’

যেসব তরুণ করোনাকালে আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলে চিকিৎসা সংকট মোকাবেলায় কাজ করেছেন, এখন মুক্তিযুদ্ধ হলে তারা অনেক ‘বড় মুক্তিযোদ্ধা’ হতেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমান।

মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। করোনারোগীদের চিকিৎসায় তিন মাস আগে গত ১৪ জুন এই সেন্টারটি চালু হয়েছিল।

অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘উনারা (আইসোলেশন সেন্টারের উদ্যোক্তা) মুক্তিযুদ্ধ দেখেন নাই। আমিও মুক্তিযুদ্ধ দেখি নাই। কিন্তু উনারা যেটি দেখিয়েছেন যে মুক্তিযুদ্ধ হলে তারা বড় মুক্তিযোদ্ধা হতেন— এটি তারা প্রমাণ করেছেন।’

মিজানুর রহমান করোনাকালে চট্টগ্রামের চিকিৎসাখাতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল অবস্থা নিয়ন্ত্রণে গঠিত সার্ভিল্যান্স টিমের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।

আইসোলেশন সেন্টারগুলো প্রতিষ্ঠার আগে কঠিন সময়ের বর্ণনা দিয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘একটা সময় আমি ঘুমোতে পারতাম না। সারারাত ফোন আসতো। এমন এমন রোগী ফোন করতো যে অমুক ক্লিনিকে গেছে, রোগী ভর্তি করাচ্ছে না। ওই এমডিকে রাতের বেলা জাগাইছি আমি। উনি বলেন আমার এখানে সিট নেই। পরে ওই রোগীকে মেডিকেল সেন্টারে পাঠালাম, সেখানেও আইসিইউ নেই। পরে পাঠালাম জেনারেল হাসপাতালে।’

ওই সময়ে চিকিৎসা পাওয়া কতটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেটি তুলে ধরে মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভর্তি হতে পেরেই রোগীর আত্নীয় এমন খুশি যেন রোগ ভাল হয়ে গেছে। কিন্তু আমি খবর নিলাম প্রায় ১০-১৫ মিনিট পরে ওই রোগী মারা গেছে। কিন্তু ওই রোগীর ছেলে আমাকে ফোন করে বলছে স্যার আপনার কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। আমি অবাক হয়ে গেছি তার কথা শুনে। এমন একটি পরিস্থিতিতে এসব আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

করোনা পরিস্থিতিতে তরুণদের ভূমিকাকে উদাহরণ হিসেবে ধরে ক্লিনিক মালিকদের কতটা প্রভাবিত করা গেছে তার উদাহরণ তুলে ধরে মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুনের ৩ তারিখে ২০টি হাসপাতালে কোভিড পজিটিভ রোগী ছিল ৪ জন আর সাসপেক্টেড ছিল ৭ জন। জুন মাসের ২০ তারিখ নাগাদ পজিটিভ রোগী দাঁড়ায় ১৫০ এর উপরে। আর সাসপেক্টেড ছিল ৩৫০ এর উপরে। গতকালও ৬৩ জন পজিটিভ রোগী আর ১৬০ এর ওপর সাসপেক্টেড রোগী। পরিস্থিতি আমূল বদলে গেল। এখন পরিস্থিতির ক্রমশ উন্নতি ঘটছে।’

করোনা আইসোলেশন সেন্টারের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এটি সাকসেসফুলি রান করেছে। এটি কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় একটি শিক্ষার বিষয়। তারা সবচেয়ে বেশি রোগীকে সেবা দিয়েছে। তাদের সেবার মানও খুব প্রশংসা পেয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে কিভাবে তারা এটা ম্যানেজমেন্ট করলো— এটা কিন্তু আমাদের জন্য একটা বিরাট লেসন লার্নিং। আমাদের এখান থেকে খুঁজে বের করতে হবে আমাদের ঘাটতি কোথায়?’

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘করোনা মহামারির শুরুতে রোগীর চাপ সামাল দিতে যখন চট্টগ্রামের সরকারি ব্যবস্থাপনার হাসপাতালগুলোতে মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারী হচ্ছিলো ঠিক তখনই করোনা আইসোলেশন সেন্টার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় নেতৃত্ব দিয়েছে। তারাই প্রমাণ করেছে শুধু মানুষের জন্য কিছু করার অদম্য ইচ্ছাকে পুঁজি করে কোন পূর্ব প্রশিক্ষণ ছাড়াই কিভাবে স্বাস্থ্যসেবায় মানুষের পাশে থাকা যায়।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও করোনাবিষয়ে স্বাচিপের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে করোনার ঘনঘোর অমানিশাকালে এ সেন্টার চট্টগ্রামের অসহায় করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে।’

আ ম ম মিনহাজুর রহমান প্রয়াত রাজনীতিবিদ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড জনপদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে খাবার স্যালাইন প্রকল্প ও ভ্রাম্যমাণ ডায়রিয়া হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার স্মৃতিচারণ করে বলেন, এই দুর্যোগকালে চট্টগ্রামের গণমানুষ এ নেতার যখন অভাববোধ করছিলো তখনই তার কর্মীরা এ আইসোলেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা নিশ্চিত করেছেন।

করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের প্রধান উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীও বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের সর্বমোট অনুদান ও আয়-ব্যয়ের হিসাব তুলে ধরেন আইসোলেশন সেন্টারের মুখপাত্র এডভোকেট জিনাত সোহানা চৌধুরী।

এতে আরও বক্তব্য রাখেন নাজিমুদ্দিন শিমুল, গোলাম সামদানি জনি, জাওইদ চৌধুরী, নুরুজ্জামান, সাদ শাহরিয়ার, মিজানুর রহমান, ডা. খন্দকার এনামুল নাইম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টারের প্রধান সমন্বয়কারী নুরুল আজিম রনি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!