করোনাভাইরাসে বাংলাদেশ কেন বেশি ঝুঁকিতে পড়ল?

সংক্রমণ ঠেকাতে হবে বিশেষায়িত কমিটির মাধ্যমে

ডা. জাহেদ মোহাম্মদ মালেকুর রহমান। কাতার সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি চিকিৎসক। বর্তমানে তিনি কাতারের কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জড়িত আছেন সিডিসি ইউনিটের সঙ্গে। কাতার সরকার শুরু থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সংক্রমণ ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। এসব বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত আছেন এই চিকিৎসক। কাতারে থেকেও বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ এবং জনগণের দিকে নজর রাখছেন তিনি। বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের করণীয় সম্পর্কে তিনি তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন।

যা ঘটে গেল তার ক্ষতি কোনভাবেই পোষানো সম্ভব নয়। তারপরও কারণগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। না হলে আরো ক্ষতির মুখে পড়তে হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

প্রথমত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরও দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে। মন্ত্রী স্বয়ং ডাক্তার না হলে ছাড় দেওয়া যেত যে তিনি বুঝতে সক্ষম হননি। যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কতখানি প্রস্তুত? কারণ এটি সাধারণ মন্ত্রণালয় নয়— মৌলিক এবং ইমার্জেন্সি।

দ্বিতীয়ত, ইতালিসহ বিদেশফেরতদের শতভাগ কোয়ারান্টাইন করতে ব্যর্থ হওয়া।

তৃতীয়ত, যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রেখে ছুটি ঘোষণা করা। বলা উচিত ছিল যে যে অবস্থানে আছে তার অবস্থান বদল না ঘটানো। সেটা সম্ভব হতো যদি আগেই যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করতো। অনেকে হয়তো বলবেন, ঢাকা ক্লিয়ার করা দরকার ছিল। ঝুঁকি যেহেতু ঢাকায় বেশি। কিন্তু ঢাকায় কন্ট্রোল করা যত সহজ, গ্রামে তত সহজ না। তাছাড়া টেস্ট সুবিধা বা কেইস ট্রেসিং ঢাকায় সহজ হতো এবং তা টেস্ট করাও সহজ হতো। এখন অবস্থা হবে অসহায়ের মত চেয়ে থাকা।

এখন যা যা দরকার—
১. স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের যোগ্যতা ও দক্ষতার বাস্তব প্রতিফলন দেখানো।
২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত তথ্য পরিবেশন স্বচ্ছতার সাথে চালিয়ে যাওয়া। তথ্য গোপন কোনোভাবেই ভালো ফল তো দেবে না। বরং আরও খারাপ হবে।
৩. সঠিক ও প্রকৃত অবস্থা জানলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও তাঁদের করণীয় নির্ধারণ করতে পারবে এবং সিচুয়েশনাল অ্যানালাইসিস করে সবাই সহযোগিতা করতে আগ্রহী হবে।
৪. গরিব ও মেহনতি মানুষের খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ সরাসরি রাষ্ট্র কর্তৃক পালন করা। সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসা।
৫. উপরের সব কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করতে সর্বদলীয় ব্যক্তিবর্গ ও অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ লোকদের সম্পৃক্ত করা। ঐক্যবদ্ধভাবেই দূর্যোগ মোকাবেলায় সরকারকে দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে।
৬. বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর সদস্যের ওই কমিটির তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে।
৭. পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়াগনস্টিক কিটস ও টেস্টের জন্য মানসম্মত ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়াতে হবে। সারাদেশে পিপিইসহ টেস্ট কিটস পর্যাপ্ত পরিমাণে সারাদেশে দ্রুত সরবরাহ করতে হবে।

জেলা উপজেলা পর্যায়ে বিদেশ, বহিরাগত বা এদের সংস্পর্শে আসা এবং কোভিড-১৯ এর প্রাথমিক উপসর্গ আছে— এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন এবং এদের প্রত্যেককে টেস্টের মাধ্যমে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করে দ্রুত আইসোলেশন ও উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

হাসপাতালগুলোতে‌ পর্যাপ্ত আইসোলেশন রুম, বেড সংখ্যা ও আইসিইউ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে—

১. জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে একটি বিশেষভাবে ক্ষমতায়িত কমিটি করা যেতে পারে। তাঁরা রাষ্ট্রীয়ভাবে সারা দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ, প্রতিকার ও চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, আইইডিসিআর প্রতিনিধি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, এনজিও প্রতিনিধি, প্রাক্তন সৎ ও যোগ্য এ বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। তাঁরা এই বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।

২. যে সকল দেশ সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ও সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে, সে সকল দেশের সাথে রাষ্ট্রীয় ও কূটনৈতিকভাবে যোগাযোগ করে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্মন্ধে তাদের অভিজ্ঞতা জানতে হবে। আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হ‌ওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে রোগের ‌প্রতিটা স্টেজে চিকিৎসা ও করণীয় বিষয় গুলো নিয়ে একটি গাইডলাইন ও প্রটোকল তৈরি করে তা সারা দেশের হাসপাতালে পাঠাতে হবে এবং তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম সকল হাসপাতালে নিশ্চিত করতে হবে।

দোহা, কাতার

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!