করোনাকালে স্কুলপড়ুয়ারা মোবাইলের নেশায়, মেজাজ খিটখিটে অনেকেরই

চট্টগ্রাম ও ঢাকার গবেষকদের ৬ মাসব্যাপি অনুসন্ধান

করোনাকালের এক বছরেই চট্টগ্রামসহ দেশের স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে মোবাইলে আসক্তি বেড়েছে ভয়াবহ মাত্রায়। চট্টগ্রাম ও ঢাকার গবেষকদের পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৮ ভাগ স্কুলপড়ুয়াই দিনে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছে মোবাইলে। ৫২ ভাগ স্কুলপড়ুয়ারই মেজাজ হয়ে গেছে খিটখিটে। এই বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক হারে বেড়েছে মাথা ব্যথা, হাত-পা ব্যথা, ঘুম ও চোখের সমস্যা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসটিসি ও সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের পরিচালিত এই গবেষণা সোমবার (৪ অক্টোবর) প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশক উইলির হেলথ সায়েন্স রিপোর্ট জার্নালে।

দেশের ২১টি জেলায় ১ হাজার ৮০৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর এই গবেষণা চালানো হয়। গত বছরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়।

করোনাকালে স্কুলপড়ুয়ারা মোবাইলের নেশায়, মেজাজ খিটখিটে অনেকেরই 1

গবেষণায় দেখা গেছে, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে মোবাইল-ট্যাবসহ বিভিন্ন গেজেট ব্যবহার করছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে মাদ্রাসা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে গেজেট ব্যবহারের প্রবণতা তুলনামূলক কম।

ওই গবেষণায় দেখা যায়, ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী দিনে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা মোবাইলে সময় কাটাচ্ছে। ৯ ভাগ শিক্ষার্থী কম্পিউটার স্ক্রিনে ও ৮ ভাগ ট্যাবে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে। মাত্র ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী মোবাইল-ট্যাবের মতো গেজেট ব্যবহার করেছে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের জন্য। ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী গেজেট ব্যবহার করেছে কার্টুন, নাটক ও সিনেমা দেখার কাজে। অন্যদিকে ফেসবুক-টিকটকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য গেজেট ব্যবহার করেছে ২৭ ভাগ শিক্ষার্থী। আর ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী শুধুই গেমস খেলার জন্য গেজেট ব্যবহার করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫২ ভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যেই বিষণ্নতা ছাড়াও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া কিংবা চট করে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। করোনাকালের দেড় বছরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব মানসিক ও শারীরিক সমস্যা বেশি দেখা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে— মাথা ব্যথা, ঘুম ও চোখের সমস্যা, বিষণ্নতা ও খিটখিটে মেজাজ এবং আকস্মিক জ্বর।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ সালে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকে দেশের ৭০ ভাগ শিশুই শারীরিক কোনো কাজ বা খেলাধুলার সুযোগ পায়নি। এদের মধ্যে ৫০ ভাগ শিশু ঘরের বাইরে শারীরিকভাবে অংশ নেওয়ার মতো কোনো কর্মকাণ্ডে ছিলই না।

গবেষণাটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. এসএম মাহবুবুর রশিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আকতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ড. আদনান মান্নান।

এতে সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন জান্নাতুল মাওয়া, এমা বণিক, ইয়াসমিন আকতার, আমিনা জাহান, নাভিদ মাহবুব, মফিজুর রহমান শাহেদ এবং জোবায়ের ইবনে দ্বীন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিসার্চের শিক্ষক নাসরিন লিপি।

অন্যদিকে গবেষণা পরিচালনায় সহায়তা দিয়েছে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডিস সোসাইটি, দৃষ্টি চট্টগ্রাম এবং ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ চট্টগ্রাম।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!