করোনাকালের প্রথম আশুরাতে নেই র‌্যালি ও তাজিয়া মিছিল

আরবি মহররম মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের জন্য ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রোজা-নামাজসহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেন। আর শিয়া মুসলমানরা বিভিন্ন ইবাদতের পাশাপাশি শোক র‌্যালিসহ আরো কিছু অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন।

রোববার (৩০ আগস্ট) দেশে আশুরা পালন করা হবে। তবে এবার করোনার কারণে শোক মিছিল এবং তাজিয়া র‌্যালি বের হচ্ছে না। গত বছরের মতো জঙ্গি হামলার কোনো হুমকি না থাকলেও আশুরার কর্মসূচিকে নিরাপদ করতে প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

চট্টগ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের ইমাম আমজাদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মহররম মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে আমরা ১০ দিন ব্যাপী আশুরার কর্মসূচি পালন করি। আমাদের কর্মসূচি আশুরার দিন মূলত শেষ হয়। প্রতি বছর আশুরার দিন সকালে শিয়া সদরঘাট ও হালিশহর শিয়া মসজিদে বিভিন্ন কর্মসূচির সাথে শোক র‌্যালিও করা হতো। করোনার কারণে এবার র‌্যালির কর্মসূচি রাখা হয়নি। অন্যান্য কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পালন করা হচ্ছে এবং হবে।’

পাহাড়তলী ওয়্যারলেস এলাকা থেকে অবাঙালিরা প্রতিবছর তাজিয়া মিছিল করতো। এবার তাদেরও তাজিয়া মিছিল হবে না জানিয়েছেন ওই সমাজের সর্দার মো. পারভেজ। তিনি বলেন, ‘এবার আমরা আমাদের মসজিদ প্রাঙ্গণে আশুরার কর্মসূচি পালন করবো। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘আশুরার কর্মসূচিতে নিরাপত্তা দিতে নগর পুলিশ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানার পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ এবং বিশেষায়িত বাহিনীও প্রস্তুত থাকবে।’

তবে গত বছর আশুরার কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার হুমকি থাকলেও তবে কোন প্রকার হুমকি কিংবা আশঙ্কা নেই বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর সদরঘাট থানার সদরঘাট শিয়া মসজিদ, হালিশহর থানার বি-ব্লক এসক্লাব মোড়, এ-ব্লকে নয়াবাজার বিশ্বরোড় মোড় এলাকায় শিয়া সম্প্রদায় শোক র‌্যালি করতো। বাকলিয়া থানার বগারবিল, পাঁচলাইশ থানার মোহাম্মদপুর আব্দুল্লাহ শাহ মাজার গলি, খুলশী থানার ও ওয়ার্লেস কলোনী ও ঝাউতলা আম বাগান, বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদ বিহারী ক্যাম্প ও আকবরশাহ থানার পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনী থেকে তাজিয়া মিছিল বের করে বিচ্ছিন্নভাবে পুরো নগরই প্রদক্ষিণ করা হতো।

তাজিয়া মিছিলে ‘হায় হোসাইন, হায় হোসাইন’ মাতমে তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের একটা অংশ নিজেদের শরীর রক্তাক্ত করতো। ২০১৭ সাল থেকে নগর পুলিশ ছুরি-বর্শাসহ ধারালো কোন ধাতব বস্তু মিছিলে বহন নিষিদ্ধ করে। সেই থেকে মাতম করে রক্তপাত বন্ধ রয়েছে।

করোনায় শোক র‌্যালি ও মিছিল বন্ধ থাকা শিয়া ও অবাঙালি সম্প্রদায়ের জন্য অনেকটা ‘পীড়াদায়ক’ উল্লেখ করে তারা বলেন, বিশ্বে বর্তমানে করোনা একটা মহাসংকট। যতই মন খারাপ হোক, বাস্তবতা মেনেই চলতে হবে। মহামারি থেকে পৃথিবী রক্ষা পাবে, তখন আমরা আবার আমাদের সব কর্মসূচি নিজেদের মতো করে পালন করতে পারবো।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!