করোনাকাণ্ডে চট্টগ্রামের এক গার্মেন্টসেই আড়াই লাখ ডলারের অর্ডার স্থগিত

পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া কেনার আদেশ স্থগিত করে দিচ্ছে বিদেশি ক্রেতারা। এর মধ্যেই ঢাকার ১৩ লাখ ডলার ও চট্টগ্রামের অন্তত আড়াই লাখ ডলারের অর্ডার স্থগিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক দিন ধরে তৈরি পোশাকের অনেক চলমান ক্রয় আদেশের ওপর স্থগিতাদেশ আসছিল। তাই এ শিল্পের উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছিলেন, স্থগিতাদেশের পরের ধাপে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেবে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড। শেষ পর্যন্ত সেটিই সত্য হলো। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত ২০টি পোশাক কারখানার অন্তত ১ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ১৪৬ কোটি টাকা সমমূল্যের ক্রয় আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। অন্যদিকে নিটওয়্যার কোম্পানিগুলোর মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ জানিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত তাদের ১৫ কারখানার ৭৩ লাখ ৮৭ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে।

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্ডার বাতিল হচ্ছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত ১০টা থেকে বুধবার (১৮ মার্চ) রাত ১০টা পর্যন্ত এই ২৪ ঘণ্টায় ৯৪টি কারখানার ১০৪ মিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেল সোয়া চারটা পর্যন্ত এটি দাঁড়ায় ১৩৩ মিলিয়ন ডলারে।

এই ধারা থেকে বাদ নেই চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেল লিমিটেড থেকে আড়াই লাখ ডলার মূল্যের ক্রয় অর্ডার স্থগিত করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ইমেইলের মাধ্যমে অর্ডার স্থগিতের বিষয়টি জানিয়েছে। এ ধরনের স্থগিতাদেশ আরও আসতে পারে— এমন শঙ্কায় রয়েছে অন্য পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোও।

চট্টগ্রামভিত্তিক পোশাক শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্মার্ট জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ইউরোপ ও আমেরিকায় আমাদের বেশ কিছু অর্ডার রয়েছে। আমি আশঙ্কা করছি তারা আমার প্রতিষ্ঠানের অর্ডার স্থগিত করতে পারে। কারণ তারা তৈরি পোশাকগুলো নেবে কোথায়? ওখানে লকডাউন করে রাখা হয়েছে শহরকে। দোকানপাটও বন্ধ। তবে অর্ডার স্থগিত করলেও আমরা হতাশ নই। কারণ এ পরিস্থিতি সবাইকে মানতে হবে।’

সুত্রমতে, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয় মঙ্গলবার ও বুধবার দুইদিনে কারখানাগুলোর কাছ থেকে ক্রয়াদেশ বাতিলের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গ্যাপ, নাইকি, ইন্ডিটেক্স, কলাম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার, রিফোরমেশনের মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দেশে তাদের বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেল লিমিটেডের আড়াই লাখ ডলারের ৭২ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া ঢাকার এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ২২ লাখ ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করেছে দুটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। বিটপী গ্রুপের ৪ লাখ ৬৬ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়েছে। বাতিল ও স্থগিতাদেশের মধ্যে পড়েছে অ্যাপেক্স হোল্ডিংসের ৪০ লাখ পিস পোশাক। আমান গ্রাফিকস অ্যান্ড ডিজাইনের ১ লাখ ১৩ হাজার ডলার মূল্যের ৩৯ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। আমান নিটিংয়ের ১ লাখ ৯৭ হাজার ডলারের ৪৪ হাজার ৭২৬ পিসের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। স্কাইলাইন গার্মেন্টসের ৮ লাখ ৫০ হাজার ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে। রুমানা ফ্যাশনের ৯০ হাজার পিস পোশাকের ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছে দুই ক্রেতা।

এ ব্যাপারে পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, প্রতিনিয়ত ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের কাছ থেকে চলমান ক্রয়াদেশ স্থগিত ও বাতিলের খবর আসছে। সামনে আরও ভয়াবহ সময় আসতে পারে আমাদের জন্য। কারণ পরিস্থিতি সবাইকে মেনে নিতেও হচ্ছে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এসএম আবু তৈয়ব বলেন, সপ্তাহদুয়েক ধরে ইউরোপে করোনাভাইরাস আঘাত হেনেছে। চীনের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, মাসদুয়েকের মধ্যে অবস্থার উন্নতি নাও হতে পারে। সেটি হলে পোশাক রপ্তানিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। এই বিপর্যয় কাটাতে হলে সরকার, ব্র্যান্ড, বিজিএমইএ ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

এরই মধ্যে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৪১টি ব্র্যান্ডের ক্রেতাগোষ্ঠীর কাছে একটি জরুরি ইমেইল পাঠিয়েছেন। রুবানা হক ওই ইমেইলে বাংলাদেশের ৪১ লাখ শ্রমিকের বেতন-ভাতা, বিশেষ করে আসন্ন দুটি ঈদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আগামী জুলাই পর্যন্ত কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার না করার জন্য বায়িং অফিস গ্রুপের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!