করোনাই বদলে দিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালকে

করোনার শুরুতে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় অন্ধের যষ্ঠীর মতই একলা সেবা দিচ্ছিল কেবল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। শুরুর দিকে এই হাসপাতালটির সবকিছু জুড়েই ছিল নেই আর নেই। সবচেয়ে বড় সংকটের জায়গা ছিল লোকবল, প্রকট ছিল চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব৷ মেডিসিন স্পেশালিষ্ট ও হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন চিকিৎসকদের আন্তরিকতাকে পুঁজি করেই শুরুতে করোনা চিকিৎসা শুরু করে হাসপাতালটি। করোনা এই হাসপাতালের চিত্র বদলে দিয়েছে অনেকটা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে বেশ। চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় বলা চলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে হাসপাতালটি। এসময় হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. জামাল মোস্তফাও বেশ মানবিক চিকিৎসা প্রশাসকের ভূমিকা পালন করেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রামের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুরুতে করোনা চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে রাজি হয়নি। পরে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল পরিচালনায় চমেককে দায়িত্ব নিতে বলা হলে তাতে রাজি না হয়ে ভিন্ন উদ্যোগ নেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর। ওই সময়ে তিনি বলেছিলেন, চমেক হাসপাতালের ম্যানপাওয়ার দিয়ে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল পরিচালনার চেয়ে চমেক হাসপাতালে আলাদা করোনা ওয়ার্ড খোলা বেশি সহজ। এর প্রেক্ষিতেই করোনার মাঝামাঝি সময়ে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হয় চমেক। পরবর্তীতে হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের অবকাঠামোগত অবস্থার যে দৈন্যচিত্র সামনে আসে তাতে প্রমাণিত হয়, চট্টগ্রামে করোনাকালের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তগুলোর একটিই নিয়েছিলেন চমেক পরিচালক।

সরকারি হিসেবে চট্টগ্রামে করোনায় ৩৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন চিকিৎসকও। গত ২৫ মে (ঈদের দিন) ভোরে চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন ডা. এসএম জাফর হোসাইন রুমি। ৩ জুন দুপুরে চট্টগ্রাম মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এবং মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. এহসানুল করিম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ৪ জুন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. মহিদুল হাসান করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

১২ জুন রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান আরেক চিকিৎসক ডা. আরিফ হাসান। ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতেন তিনি। একদিন পর ১৪ জুন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন চট্টগ্রামের জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাদেকুর রহমান। এছাড়া ১৭ জুন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেন ডা. নুরুল হক। ২১ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে নাক, কান ও গলারোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীণ চিকিৎসক ডা. ললিত কুমার দত্ত এবং একদিন পর ২৪ জুন মারা যান চট্টগ্রামে প্রথম প্লাজমা থেরাপি নেওয়া চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. সমিরুল ইসলাম।

২৪ জুন দিবাগত রাতে ডা. শহিদুল আনোয়ার নামে আরও এক প্রবীণ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়। ২৬ জুন রাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অবসরপ্রাপ্ত মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ হোসেন মারা যান। গত ১৪ জুলাই দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৩৪ বছর বয়সী চিকিৎসক সুলতানা লতিফা জামান আইরিন।

৩ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ডা. মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী (তসলিম) এক চিকিৎসকের। তিনি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ভোরে বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের কোভিড শনাক্তকরণ আরটিপিসিআর ল্যাবের চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হাসান মুরাদ।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!