কবে ভাঙ্গা হবে হোটেল শৈবাল?

এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার প্রতিনিধি :

এক সময়ে অনেক নামি আবাসিক হোটেল হিসেবে পরিচিত থাকলেও ইদানিং জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে পর্যটন কর্পোরেশনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের হোটেল শৈবাল, মোটেল উপল ও প্রবাল। প্রয়োজনের তাগিদে অন্যান্য হোটেল-মোটেলগুলোতে প্রায় প্রতি বছরই পরিবর্তন আনা হলেও বিশ বছরেও চেহারায় কোনও পরিবর্তন আসেনি সরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর।

shaibal

তবে সম্প্রতি শৈবাল হোটেল ভেঙ্গে বিশ্বমানের পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করার ব্যপারে উদ্যোগ নিলেও তা পিছিয়ে গেছে। এতে করে হতাশ হোটেলের বড়কর্তারা। আর স্বাভাবিকভাবেই একটু শস্তির নিঃশাস ফেলছেন কর্মচারি ও কার্য সহকারীরা। সরকার হোটেল শৈবাল ভেঙ্গে সেখানে ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের পাঁচ তারকা হোটেল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিলেও তা আবারো পিছিয়ে গেছে।
তেমন কোনো আকর্ষণ নেই পর্যটন হোটেল শৈবালের। সামনের দিক থেকে তাকালে এটি শুধু সরকারি কোনো স্থাপনা বলে মনে হবে। আবার পার্ক মনে করে অনেকেই এখানে ঢুকে পড়েন। অথচ একসময় শৈবালই ছিলো কক্সবাজার শহরের একমাত্র সবচেয়ে বড় ও তারকা মানের হোটেল। আর পর্যটন নগরীতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারী হোটেল-মোটেলগুলোতে প্রতি বছর পরিবর্তন আনা হলেও বিশ বছরে একটি চেয়ারও পরিবর্তন হয়নি শৈবালের।
জানা গেছে, পর্যটন শিল্পের বহুমাত্রিক বিকাশের জন্য নতুন পরিকল্পনায় শৈবাল ঘিরে অত্যাধুনিক সুবিধা যুক্ত করে ৮০০ কোটি টাকার পরিকল্পনায় এগুচ্ছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। সে পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৬টি বিচ ভিলা, ১৬৮টি পুল ভিলা, ২৬টি ওয়াটার ভিলা, বর্তমান শৈবালে একটি থ্রি-স্টার মানের হোটেল, ১৮ হোলের গলফ কোর্স, ক্লাব হাউস, ২৫০ কক্ষের পাঁচ তারকা মানের হোটেল টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, কক্সবাজারে পাঁচ তারকা মানের সব সুবিধা দিয়ে নতুন করে সাজবে হোটেল শৈবাল। আর পর্যটন হোটেল ‘প্রবাল’-এ হবে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। সেই সাথে ভাঙ্গা হবে মোটেল উপলও। তবে হোটেল শৈবাল ও উপলের এমন উন্নয়নের কথা শুনে সরকারী বড়কর্তারা যেমন খুশি হয়েছে অপর দিকে দু:শ্চিন্তার ছাপ দেখা গেছে হোটেলটির কর্মচারীদের মধ্যে।

 

সরকারী এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমনও অনেক কর্মচারী রয়েছে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আসলেও এখনো কার্য-সহকারী ভিত্তিতেই রয়ে গেছে। অর্থাৎ সরকারী নিয়োগ ছাড়া চুক্তির ভিত্তিতে প্রয়োজন অনুসারে কাজ করছেন। এই সমস্ত কর্মচারীরা এখনো জানে না এই হোটেলটি ভাঙ্গা হলে তাদের কি হবে। তাই তারা চাকরী হারানোর ভয়ে আতংকিত।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োজিত সরকারী কর্মচারীরা রয়েছেন বদলি আতংকে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা অনেক কর্মচারীরা তাদের পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বসবাস করছেন। কিন্তু হোটেলটি ভাঙ্গা পড়লে তাদের অন্যত্র বদলী করে দেয়া হবে আর বাদ পড়ে যেতে পারে কার্য-সহকারীরা।
তবে সরকারী কর্মকর্তারা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। মোটেল উপলের ব্যবস্থাপক দেব দুলাল তেওয়ারী বলেন, মোটেলটি ভেঙ্গে অত্যাধুনীক হোটেলে রুপান্তর করার ভাল উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে এই কাজ কবে শুরু হবে তার কোন ঠিক নেই। এবছরের মধ্যে কাজটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশনের অধিনে কাজটি না হয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একটি শাখা বিষটি তদারকি করাতেই একটু দেরি হচ্ছে।
বর্তমানে পর্যটন মোটেল উপলে কার্য-সহকারী ১৩জন ও সরকারী কর্মকর্তা রয়েছে মাত্র ২জন আর হোটেল শৈবালে সরকারী কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কার্য-সহকারী মিলে রয়েছে মোট ৪০জন।
হোটেল শৈবালের ব্যবস্থাপক শ্রীজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, মন্ত্রনালয় থেকে নির্দেশনা আসলেই হোটেলর কাজ শুরু হবে। এখন পর্যন্ত নিশ্চত হওয়া যায়নি ঠিক কবে থেকে কাজ শুরু হচ্ছে। কার্য-সহকারীদের ব্যপারে তিনি বলেন, তাদের আমরা পর্যটনের অন্যান্য হোটেলগুলোতে কর্মক্ষেত্র তৈরী করে দেব। তাদের অনেক অভিজ্ঞতা, দীর্ঘদিন ধরে কার্য-সহকারীরা শৈবালে কর্মরত আছেন তাদের জন্য অবশ্যই আমরা কিছু একটা করবো। এ বিষয়ে আমরা উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবো যেন তাদের বেকার হয়ে যেতে না হয়।
এদিকে জেলার বিশিষ্টজনরা বলছেন, বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন হোটেলগুলো যদি প্রতি বছর কোটি টাকা ব্যবসা করতে পারে সেখানে সরকারের এতো বড় প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার থেকে কেন রাজস্ব বর্ধিত হবে। তাদের মতে অতি দ্রুত পর্যটনের পুরাতন হোটেলগুলো ভেঙ্গে নতুনভাবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করা হোক। পর্যটনের হোটেল মোটেলগুলোর কর্মকর্তা, কর্মচারি, কার্য-সহকারী, বিশিষ্টজনসহ সবার এখন একটিই প্রশ্ন ‘কবে ভাঙ্গা হবে হোটেল শৈবাল’

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!