কন্টেইনার জট নেই বন্দরে, এক তৃতীয়াংশ ইয়ার্ড খালি

জট না থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডের এক-তৃতীয়াংশ জায়গা খালি পড়ে আছে। যেখানে রাখা যাবে ২০ হাজার টিইউএস কন্টেইনার। বন্দরে কন্টেইনার জট না থাকায় এবং দ্রুত ডেলিভারি হওয়ায় ইয়ার্ড খালি রাখা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান বন্দরের কর্মকর্তারা। তবে এটি বন্দরের জন্য একটি পজিটিভ দিক। বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল হওয়ায় কন্টেইনার দ্রুত ডেলিভারি হচ্ছে।

জানা গেছে, বন্দরের ইয়ার্ডে ৫০ হাজার টিইউএস ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দরের কন্টেইনার রয়েছে ৩৩ হাজার ৩৬টি। বুধবার (৮ জানুয়ারি) বন্দরে কন্টেইনার রয়েছে ৩৩ হাজার ৫১১টি। ইয়ার্ডে আরও ২০ হাজার কন্টেইনার রাখা যাবে। এর আগে বন্দরে কন্টেইনার জট থাকলেও ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে। এখন কন্টেইনার রাখার জায়গাও খালি যাচ্ছে।

সূত্রমতে, এক সময় প্রতি মাসেই বন্দরে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার কন্টেইনার জমা থাকতো। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার কন্টেইনার ছিল ধ্বংসযোগ্য। সম্প্রতি ২০৫ কন্টেইনার নষ্ট পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। আর আগেই বেশ কিছু কন্টেইনারে পণ্য ধ্বংস করে খালি করা হয়েছিল। এতে কন্টেইনার রাখার জায়গা বাড়ে বন্দরে। এছাড়া দ্রুত ডেলিভারি দেওয়ার ফলে বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জমা থাকছে না বলে জানা গেছে।

বন্দর সূত্র মতে, বুধবার (৮ জানুয়ারি) বন্দরে ৮ হাজার ৮৪৫টি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং হয়েছে। ৫০ হাজার কন্টেইনার রাখার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ইয়ার্ডে কন্টেইনার ছিল ৩৩৫১টি। বন্দরে জাহাজ রয়েছে ১৪০টি। বহির্নোঙ্গরে ১১৯টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে কাজ চলছিল ৫২টিতে। মেইন জেটিতে রয়েছে ১৭টি।

ডিসেম্বর মাসে ১ লাখ ৮৬৬ হাজার ৯৯১ টিইউএস কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে। নভেম্বর মাসে ৩৩৫টি জাহাজ থেকে বন্দরে কন্টেইনার পরিবহন হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৪৯টি। অক্টোবর মাসে ৩৫৬টি জাহাজ থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৩ টিইউএস পরিবহন হয়েছে।

জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২৯ লাখ এক হাজার ৪৯টি কন্টেইনার পরিবহন করে বন্দর। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ২ হাজার ৪২টি কন্টেইনার পরিবহন করা হয়েছে। বন্দরের জেটি, পানগাঁও টার্মিনাল ও কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো মিলে কন্টেইনার পরিবহনের এই সংখ্যা হিসাব করা হয়েছে।

গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের রের্কড। এর আগে ২১ ডিসেম্বর বছরে ত্রি মিলিয়নিয়ার কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের রেকর্ড অর্জন করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে এই অগ্রযাত্রাটা ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। আরও সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বন্দরের জলসীমা বাড়ানো, বে টার্মিনার, ইক্যুইপম্যান্ট ক্রয়সহ নানা পরিকল্পনা করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। আমাদের দেশের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। অন্য কোনও দেশের ব্যবহারের জন্য নয়। কারণ জাতীয় রাজস্ব আয়ের ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি হয়। তাই আমরা আমাদের বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছি। নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছি।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এখন একটি অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করছে। আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতিসহ, বন্দরের বেশ কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের সেরা বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর ৬৪তম। তালিকা অনুযায়ী, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ছিল ৭০তম অবস্থানে। এর আগে ২০১৬ সালে এই বন্দরের অবস্থান ছিল ৭১তম। ওই তালিকায় কন্টেইনার পরিবহনে বিশ্বের সেরা ১০০ বন্দরের মধ্যে শীর্ষস্থানে আছে চীনের সাংহাই বন্দর। আগামী এ তালিকায় বন্দরের আরও উন্নতি হবে। অর্থাৎ ওই তালিকায় আরও কয়েক ধাপ নামবে।

এএস/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!