কদিন পর পর ‘ওষুধ’ ছিটিয়েও চট্টগ্রামের মেয়রের বাড়িতে মশার কয়েল জ্বলে দিনরাত

মশার ওষুধ কেনার নামে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সক্রিয় সিণ্ডিকেট

কিছুদিন পর পর সিটি কর্পোরেশনের লোক গিয়ে ঘর ও ঘরের বাইরে মশার ওষুধ ছিটিয়ে আসে। এরপরও মশার এমন উপদ্রব যে, খোদ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসাতেই সারাক্ষণ জ্বালিয়ে রাখতে হয় মশার কয়েল। চসিক মেয়র মশার উপদ্রবকে ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে মন্তব্য করলেও তাকে কয়েল জ্বালিয়েই মশার ‍উৎপাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আসা একাধিক ছবিতে দেখা যায়, নতুন বছরের প্রথম দিন শনিবার (১ জানুয়ারি) নগরীর বহদ্দারহাটে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী তার বাসভবনের উঠানে ঘরোয়া বৈঠক করছেন কাউন্সিলর জেসমিন পারভীন জেসির সঙ্গে। সেখানে মেয়রের পায়ের নিচে দেখা যাচ্ছে, একটি কয়েল জ্বলছে।

এ ধরনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন— ‘তবে কি মেয়র নিজেও নগরবাসীর মতো মশার কাছে অসহায়?’ আবার কেউ মন্তব্য করেছেন— ‘মেয়র কয়েল জ্বালিয়ে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পুরো নগরবাসীকে মশা থেকে সুরক্ষিত রাখার গুরু দায়িত্ব তার কাঁধে। সেই দায়িত্ব পালনে মেয়র কতটুকু সফল হয়েছেন তা মশার উৎপাত দেখলে সহজে অনুমান করা যায়।’

চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু এর বিপরীতে নগরবাসীকে ন্যূনতম স্বস্তিও দিতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম ও ওষুধ ছিটানো নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে বরাবরই।

২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণকালে রেজাউল বলেছিলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা প্রথমে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবো।’ এরপর মশা মারার কার্যকর ওষুধ খুঁজতেই পার করেছেন প্রায় এক বছর।

এখনও মশা দমনের কার্যকর ওষুধের হদিস পায়নি চসিক। এর আগে দুই বছর মশা মারতে যে ওষুধ ছিটিয়েছিল সিটি করপোরেশন, পরীক্ষার পর দেখা গেছে সব ওষুধ ছিল অকার্যকর। অথচ অকার্যকর ওই ওষুধই কেনা হয়েছিল দুই কোটি টাকায়। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সিটি মেয়র রেজাউল করিম মশা নিধনে নেন ১০০ দিনের ক্র্যাশ কর্মসূচি। তার ওই কর্মসূচিও পুরোপুরি ‘ফ্লপ’ মেরেছে।

এতো ওষুধ ছিটানোর পরও মশা নিধন না হওয়ায় ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করে দেখতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে দেয়। তারা সিটি করপোরেশনের ব্যবহৃত দুটি ওষুধসহ মোট ছয়টি ওষুধ পরীক্ষা করেন। এতে মাত্র একটি ওষুধের কার্যকারিতা পান তারা। অকার্যকর ওষুধগুলোর ব্যবহার বন্ধ করে কার্যকর ওষুধটি ব্যবহারের সুপারিশ করেন কারিগরি টিমের বিশেষজ্ঞরা। পরে এটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করলেও ওষুধটি কেনেনি সিটি করপোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওষুধটির ব্যবহারে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাড়পত্র নেই।

কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মশার ওষুধ কেনার নামে ‘বাণিজ্য’ করতে সিটি কর্পোরেশনের এক কাউন্সিলরের নেতৃত্বে একটি সিণ্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। নানা নিয়মকানুনের দোহাই দিয়ে তারা তাদের ইচ্ছেমতো ওষুধই কিনতে চাইছে নিজেদের লোক থেকে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!