কথা শুনতেন না, হাত-পা বেধে তাই স্ত্রীকে খুন খুলশীতে

ঘাতক স্বামী সন্দ্বীপে গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম নগরের খুলশীতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া স্বামী রেজাউল করিমকে (২৯) সন্দ্বীপ থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাকে খুলশী থানায় নিয়ে আসা হয়।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) সন্দ্বীপের উড়িরচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘাতক স্বামী রেজাউল করিম সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা মছজিদ্দা এলাকার আবুল মনসুরের পুত্র। চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে তিনি চাকরি করেন পাঁচ বছর ধরে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী রোজিনা আক্তারকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন রেজাউল করিম। হত্যার পর তিনি সন্দ্বীপ পালিয়ে যান।

রেজাউল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নিহত রোজিনা পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি করতেন। চাকরির সূত্র ধরে দুই বছর আগে তাদের পরিচয়। রেজাউলের পরিবারের বিরোধিতার মুখেও ১০ মাস আগে তারা বিয়ে করেন। পরে খুলশী থানার ডিজেল কলোনিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

রেজাউল পুলিশকে জানিয়েছেন, দুই মাস আগে থেকে রোজিনার সঙ্গে তার পারিবারিক কলহ শুরু হয়। রোজিনা রেজাউলের কথা শুনতেন না এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল তার মনে। তাদের বাসা থেকে সামান্য দূরে রোজিনার বড় বোন মনি আক্তারের বাসা। চাকরির ডিউটি শেষে রোজিনা ওই বোনের বাসায় খাওয়া-দাওয়া করতো। রেজাউল নিজেও সেখানে খেতেন। এজন্য মাসে ৬ হাজার টাকা ওই বোনকে দিতে হতো।

রেজাউলের অভিযোগ, তার স্ত্রী বোনজামাইয়ের কথামতো চলতেন। বাসায় আসলেও কথা বলতেন না। এ নিয়ে প্রায়ই কথা কাটাকাটি হতো। এসব নিয়ে স্ত্রীর ওপর তার ক্ষোভ ছিল।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে রেজাউল পুলিশকে জানিয়েছেন, ২ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় বোনের বাসায় খেয়ে এসে রাত দেড়টার দিকে রোজিনা ঘুমিয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পর রোজিনার মুখে একটি পাতলা কম্বল দেয়। সঙ্গে সঙ্গে কাঁচের গ্লাস দিয়ে রোজিনার মাথায় সজোরে তিন-চারবার আঘাত করে। এ সময় ঘুম ভেঙে রোজিনা চিৎকার শুরু করলে রেজাউল তার গলা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে। হাঁটু দিয়ে বুক চেপে ধরে। এরপর জুতার ফিতা ও লুঙ্গি-গামছা দিয়ে মুখ ও মাখা বেঁধে ফেলে। রোজিনার দুই হাত পিছনে নিয়ে ওড়না দিয়ে বাঁধে। এর একপর্যায়ে রোজিনার মৃত্যু হয়। পরে হাত-পা বেধে মরদেহ বেডশিট দিয়ে ঢেকে রেখে রাত সাড়ে তিনটার দিকে দরজার বাইরে তালা দিয়ে পালিয়ে যান তিনি। সকালেই রেজাউল সন্দ্বীপ চলে যান। সেখানকার উড়িরচর এলাকায় এক পরিচিত বন্ধুর মাধ্যমে একটি চা দোকানে চাকরি নেন।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) রেজাউল করিমকে আদালতে হাজির করা হবে। সেখানে তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে।

গত ৩ ডিসেম্বর সকালে ডিজেল কলোনির একটি বাসা থেকে হাত-পা বাধা অবস্থায় রোজিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রোজিনার বোন মনি আক্তার বাদি হয়ে রেজাউল করিমকে আসামি করে খুলশী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!