কক্সবাজারে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে জরুরি সহায়তা দিয়েছে আইওএম
কক্সবাজারে টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাজার হাজার মানুষের আশ্রয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি আশ্রয়ও হারাচ্ছে এসব শরণার্থীরা। একইসঙ্গে এ বিশাল জনগোষ্ঠীর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকাও বাড়ছে। গত ৪ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলমান মৌসুমী বৃষ্টিপাতের কারণে গত বছরের তুলনায় বেশি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) আইওএম-বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান ম্যানুয়েল পেরেইরা বলেন, ‘টানা বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে ক্যাম্পে অবর্ণনীয় দুর্দশা বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের জরুরি সাহায্য প্রদান ও তাদের পুনরায় আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমাদের সবগুলো টিম দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। যদিও আমরা দুর্যোগের তাৎক্ষণিক ক্ষতি কাটানোর জন্য কাজ করছি। কিন্তু আমাদের অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উপর জোর দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইওএম (৯ ও ১০ জুলাই) দুই দিনে প্রায় ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে জরুরি সাহায্য প্রদান করেছে এবং ২০১৮ সালের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৭০ মানুষকে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি এই অঞ্চলের মানুষকে বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা সবে মাত্র এই মৌসুমের অর্ধেক সময় পার করছি।’
গত ৪৮ ঘন্টায় আইওএমের ক্যাম্পে থাকা টিমগুলো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রায় ৫ হাজার ৭৯টি প্লাস্টিক ট্রিপল বিতরণ করেছে। কুতুপালং মেগাক্যাম্প এলাকায় গত ২৪ ঘন্টায় মোট ১৫২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আইওএম এবং এর পার্টনার সংস্থাগুলো চলমান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনমত তাৎক্ষণিক সাহায্য করছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ফলে ক্যাম্প ও আশে-পাশের এলাকায় রাস্তাঘাট, সেতু এবং নালা-নর্দমার অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে বলে আশংকা করছেন আইওএমর প্রকৌশলীরা।
গত ৯ জুলাই রাত থেকে ১০ জুলাই রাত পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ৯৯৮ জন মানুষ এবং ৯১২টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইওএমের টিমগুলো গত ২৪ ঘন্টায় মোট ছয়টি মাটিধস, আট বার ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত এবং ১৭৪ জন মানুষ গৃহহীন হওয়ার খবর রেকর্ড করেছে।
আইএসসিজি (ইন্টার সেক্টর কোর্ডিনেশন গ্রুপ) বলছে, মৌসুমী দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে এবছর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৮ সালের রেকর্ড ছাড়াতে পারে। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের মৌসুমে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৫ হাজার। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে প্রায় ৫ হাজার ৬০০ মানুষ গৃহহীন হয়েছে অথচ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ২০০ জন। এ বছর জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় ২২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ১৯ হাজার মানুষ।
এএইচ