কক্সবাজারে ডাকাতির কবলে পড়ে চরম ক্ষতির সম্মুখিন মাছ ব্যবসায়িরা : সাগরে বোট না যাওয়ায় আহাজারি জেলে পরিবারে

এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার প্রতিনিধি ॥

সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, গভীর নিম্নচাপ, ডাকাতি ও অপহরণের কবলে কক্সবাজারের জেলেরা। সব মিলিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তা ও বিপাকে পড়েছেন মৎস সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে জেলে পরিবারগুলোতে চলছে আহাজারি আর অন্যদিকে ডাকাত আতংকে সাগরে বোট পাঠাতে না পেরে মালিকরা চিন্তিত বড় ধরনের লোকসান নিয়ে। বলতে গেলে বোট মালিক ও জেলে-মাঝি পল্লীতে করুন দশা বিরাজ করছে। এদিকে ডাকাতির ঘটনায় মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেরা উদ্ধিগ্ন হয়ে ডাকাতি বন্ধের দাবীতে প্রতিবাদ সভা করেছে ফিশারী ঘাটস্থ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ীরা।

কক্সবাজারে ডাকাতির কবলে পড়ে চরম ক্ষতির সম্মুখিন মাছ ব্যবসায়িরা : সাগরে বোট না যাওয়ায় আহাজারি জেলে পরিবারে 1
সম্প্রতি বঙ্গপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ডাকাতরা। সংঘবদ্ধ জল ডাকাতরা এক রাতেই অন্তত ৪০ টি মাছধরার বোটে ডাকাতি চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত এই ডাকাতি চলে। ডাকাতরা ওইসব বোটের জেলেদের বেদম মারধর করে মাছ, জাল, মেশিন, মোবাইলসহ অন্যান্য মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। ডাকাতির শিকার বোটগুলো প্রায়ই মহেশখালী ও কক্সবাজার শহরের।
গতকাল দুপুর পর্যন্ত ডাকাতির শিকার কয়েকটি বোট কূলে ফিরতে সক্ষম হলেও এখনও সাগরে ভাসছে অনেক বোট। জেলা বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহামদ এই তথ্য জানান।
মোস্তাক আহামদ জানান, সম্প্রতি সাগরে নিম্নচাপ এর শংকা কাটিয়ে কক্সবাজার জেলার সব বোট মাছ ধরতে সাগরে যায়। মাছ ধরারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সংঘবদ্ধ জলডাকাত দল বোটের উপর হামলা করে।

ডাকাতরা কক্সবাজার উপকূলে মাছধরারত প্রায় ৪০ টি বোটে ডাকাতি চালিয়ে মাছসহ অন্তত দু’কোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এসময় ডাকাতরা অন্তত তিন শতাধিক জেলেকে বেদম প্রহার করেছে। প্রহারে অনেক জেলে গুরুতর আহত হয়েছে। ডাকাতির শিকার দশটির মতো বোট কূলে ফিরেছে।
তিনি জানান, সাগরে ডাকাতির শিকার বোটগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়ার আবদুল হালিম জনির মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া, একই এলাকার ওসমান গণি টুলুর মালিকানাধীন এফবি নিশান, মহেশখালী পৌরসভার ঘোনাপাড়ার আবদুল জলিলের মালিকানাধীন এফবি আল্লাহর দান, একই এলাকার আনছার উল্লাহর মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া, গোরকঘাটার জালাল আহামদ এর মালিকানাধীন এফবি মায়ের দোয়া, মাবুত সওদাগরের এফবি মা-বাবার দোয়া।
জেলেদের বরাত দিয়ে মোস্তাক আহামদ আরো জানান, নিম্নচাপের পর সাগরে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। মাছ ধরা পড়ায় ডাকাতরা হামলা চালায়। সোনাদিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বাঁশখালী ও চট্টগ্রামের দুর্ধরষ ডাকাতদের নেতৃত্বে এই ডাকাতি হয়েছে।
ডাকাতির শিকার এফবি মা-বাবার দোয়ার মালিক মাবুত সওদাগর জানান, তার মালিকানাধীন এই বোটে থাকা মাছ, জাল, জেলেদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ব্যাটারী, তেল, মেশিন ও মেশিনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশসহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করেছে ডাকাতরা। এসময় ডাকাতদের বেদম প্রহারে বোটের জেলেরা আহত হয়েছে। মোবাইলে বিষয়টি জানান বোটের জেলেরা।
মাবুত সওদাগরের বোটে থাকা আবদুর রশিদ মাঝির বরাত দিয়ে তিনি জানান, তার বোটটি শনিবার দুপুর ১২টায় বঙ্গপসাগরের টেকনাফ উপকূলের পশ্চিমাংশে ডাকাতের কবলে পড়ে। ডাকাতরা চট্টগ্রাম থেকে আনা বিশাল বোটে করে ডাকাতি তান্ডব চালায়। ডাকাতরা বাঁশখালী, হাতখালী ও কুতুবদিয়া অঞ্চলের হতে পারে বলে আশংকা করছে জেলেরা। মহেশখালীর ছোট বড় প্রায় ১০টির মতো বোট ডাকাতি হয়েছে বলেও তিনি জানান।
জেলা বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহামদ বলেন, ‘ডাকাতির শিকার সব বোটের মেশিনের যন্ত্রাংশ লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। এতে বোটগুলো বিকল হয়ে সাগরে ভাসতে থাকে। তিনি বলেন, সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা, গভীর নিম্নচাপ ও ডাকাতির তান্ডবে গত একমাস ধরে জেলে ও বোট মালিকরা চরম দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। আমাদের অবস্থা খুই করুন, আতংকে আমরা সাগরে বোট পাঠাতে পারছি না। বোট সাগরে যেতে না পারলে জেলে পরিবারগুলো না খেয়ে থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্ধরষ ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সাগরে ডাকাতি থামছে না। আমরা স্থানীয় কোষ্ট গার্ড এর সাথে কথা বলেছি তবে তারা বিভিন্ন অযুহাত দেখায়। তাই আমরা সাগরে ডাকাতি রোধে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ডাকাতি বন্ধের দাবিতে প্রতিবাদ সভায় মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পর সমুদ্রে মাছ ধরারত জেলেরা ঘুর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। এতে বেশ কয়েকটি ট্রলার সহ শতাধিক জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার থেকে সাগরে মাছ ধরারত জেলেরা গণহারে ডাকাতির শিকার হচ্ছে।

ডাকাত দল শতাধিক ট্রলারের মাছ, জাল, মেশিনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও তেল সহ সবকিছু লুঠ করেছে। ডাকাতের মারধরে আহত হয়েছে ২০ জন জেলে। মাঝি-মাল্লা সহ ২টি ট্রলার অপহরণ করে সন্দীপ নিয়ে আটকে রেখে সাড়ে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে। এতে ট্রলার মালিক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ডাকাতি ও অপহরণ সহ মুক্তিপণ আদায় বন্ধে প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে ব্যবসায়ীরা বলেন,  ডাকাতি বন্ধ করা না হলে সকলকে সাথে নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হবে।

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!