কক্সবাজারে ওসির বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

বিরোধপূর্ণ হোটেল অবৈধভাবে জবর দখল করে দিতে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসির বিরুদ্ধে একপক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে সরকার দলীয় কর্মী ও ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।

সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এমএ মোনাফ সিকদার, জেলা প্রজন্মলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ওবাইদুল হোছাইন ও ব্যবসায়ি গুরা মিয়া।

রোববার (২ মে) বেলা সাড়ে ১২টায় কক্সবাজার রিপোর্টাস ইউনিটি কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা প্রজন্মলীগের সিনিয়র সহসভাপতি ওবাইদুল হোছাইন বলেন, গত ১৩ এপ্রিল দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনস্থ আমার আত্মীয় রিদুয়ান ছিদ্দিকের মালিকানাধীন ‌’হোটেল স্বপ্ন রিসোর্ট’ পুলিশের সাথে আতাঁত করে জবর দখলের চেষ্টা চালায় একাধিক ইয়াবা মামলার আসামি ও জেলফেরত ঈদগাঁও চালালাবাদ এলাকার মৃত রিয়াজের পুত্র মো, নাসির। এ সময় জাতীয় সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে সহযোগিতা চাওয়া হয়। কিন্তু থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেতে গড়িমসি করে। একপর্যায়ে ঘটনার ১ ঘন্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নাসির, কলাতলীর সবুজসহ ৩ জন দুস্কৃতিকারীকে ঘটনাস্থল থেকে হাতে নাতে আটক করে পুলিশ ভ্যানে তুলে। কিন্তু পরে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনিরুল গীয়াসের নির্দেশে ঘটনাস্থল থেকে আটক ৩ জনকে ছেড়ে দেওয়া। এ সময় তাদের কথামত রিসোর্টে তালা মেরে চাবি ওসির কাছে জমা দেয় পুলিশ। ওই দিনই ১৮ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দেয়া হয়। কিন্তু ওসি ওই এজাহার নিয়মিত মামলা হিসাবে রুজু করেননি।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, পরে ইয়াবা ব্যবসায়ি নাছিরকে অবৈধভাবে হোটেল দখল করিয়ে দিতে নগদে ১০ লাখ টাকা নেন ওসি। তারপর তার মিশন সফল করতে সম্প্রতি ফেইসবুকে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমানের নামে বিভিন্ন মানহানিকর ও অনৈতিক পোষ্ট প্রচারের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় আমাকে ২ নম্বর আসামি করা হয়।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এমএ মোনাফ সিকদার বলেন, শফিক খাঁন নামের একটি ফেইসবুক আইডি থেকে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছিল। এই ঘটনায় পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বাদি হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। ওই মামলায় আমাকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে। যা আমি কিছুই জানিনা। ওই আইডির কোন স্ট্যাটাস শেয়ার, লাইক বা কমেন্টের সাথে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নই। মূলত আমার আত্মীয়ের হোটেল কলাতলীর স্বপ্ন রিসোর্ট অবৈধভাবে দখল করে দেওয়ার মিশনে পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানেরও ইন্ধন রয়েছে। যে কারণে আমাকেও আসামি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ি গুরা মিয়া জানান, কক্সবাজার সদর মডেল থানার জিআর-২৭৭/২০২১ নং মামলায় আমাকেও আসামী করা হয়েছে। কিন্তু আমি ফেইসবুক সর্ম্পকে তেমন কিছুই জানিনা। আমি ওসির ঘুষ বাণিজ্যের বিচার দাবি করছি।

হোটেল মালিক রিদুয়ান ছিদ্দিক জানান, মূলত এসআই মো. দস্তগীর হোসেন ও ওসি মনিরুল গীয়াস আমার হোটেলটি ইয়াবা ব্যবসায়ি নাছিরকে দখল করে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে আমার আত্মীয় স্বজনদের বিরদ্ধে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাটি দিয়ে হয়রানি করছে। আমি এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ওসি বিচার দাবি করছি।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) শেখ মনিরুল গীয়াস বলেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এখানে টাকা লেনদেনের কোন প্রশ্নই আসে না। এটি আমার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যাচার এবং বিভ্রান্ত করার জন্যই টাকা লেনদেনের মত জঘন্য অভিযোগ আনা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ডের পর নানা অভিযোগ ওঠায় সঠিক তদন্তের স্বার্থে পুলিশ সুপারের নির্দেশে থানা থেকে মামলাটি জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় নিয়ে আসার কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই মামলায় প্রকৃত অপরাধী ছাড়া কোন নিরাপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার হবে না বলে তিনি জানান।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!