কক্সবাজারে ইয়াবা, অস্ত্র কারবারি ও জলদস্যুদের আত্মসমপর্ণই ছিল আলোচনার শীর্ষে

ফিরে দেখা ২০১৯

নিয়মেই মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২০১৯ সাল। আর নতুনের আশায় মানুষ বরণ করে নিয়েছে আশার ২০২০ সালকে। কালের বির্বতনে ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরেপড়া ২০১৯ সালে কক্সবাজার জেলায় সংঘঠিত হয়েছে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। এর মধ্যে বেশ কয়েকটা ছিল সারাদেশের জন্য আলোচিত।

বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে পর মাঠে আইনশৃংখলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১০২ ইয়াবা কারবারির আত্মসপর্মণ ছিল বেশ আলোচিত। তবে ইয়াবা কারবারিদের তালিকায় উখিয়া-টেকনাফ আসনের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির নাম থাকলেও অবশেষে তার আত্মসমপর্ণ না করার বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। তাছাড়া কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলার জলদস্যু, অস্ত্র কারবারি ও সন্ত্রাসীদের আত্মসমপর্ণও নজর কেড়েছে মানুষদের। আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধের একের এক ইয়াবা কারবারি, সন্ত্রাসী, জলদস্যু, অস্ত্র কারবারি নিহত হওয়ার ঘটনাও নজর কেড়েছে মিডিয়ায়।

শতাধিক ইয়াবা কারবারির আত্মসমর্পণ
২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন কক্সবাজার জেলার ১০২ জন ইয়াবা চোরাকারবারি। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারী এই ১০২ জনের মধ্যে ২৪ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করা তালিকায় ‘গডফাদার’ হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। ওই তালিকায় টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির নাম থাকলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। তবে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে বদির চার ভাইসহ আট স্বজন রয়েছেন। অনুষ্ঠানে আত্মসমর্পণকারীরা সাড়ে ৩ লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশে তৈরি বন্দুক এবং ৭০টি গুলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জমা দেন। পরে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

কক্সবাজারে ইয়াবা, অস্ত্র কারবারি ও জলদস্যুদের আত্মসমপর্ণই ছিল আলোচনার শীর্ষে 1

আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারিরা হলো
বদির ভাই আব্দুর শুক্কুর (৩৩), বদির ভাই আমিনুর রহমান ওরফে আব্দুল আমিন (৪১), নুরুল হুদা (৩৮), দিদার মিয়া (৩৫), বদির ভাগনে মো. সাহেদ রহমান নিপু (৩৩), আব্দুল আমিন (৩৪), নুরুল আমিন (৩৭), বদির ভাই শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক (২৯), বদির ভাই ফয়সাল রহমান (২৯), এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বার (২৪), একরাম হোসেন (২৫), ছৈয়দ হোসেন (৫৫), বদির বেয়াই সাহেদ কামাল ওরফে সাহেদ (৩২), মৌলভী বশির আহমদ (৬৫), শাহ আলম (৩৫), আব্দুর রহমান (৩০), মোজাম্মেল হক (২৮), জোবাইর হোসেন (৩০), নুরুল বশর ওরফে কাউন্সিলার নুরশাদ (৩১), বদির ফুপাত ভাই কামরুল হাসান রাসেল (৩৫), আব্দুর রহমান (৩২), জিয়াউর রহমান ওরফে জিহাদ (২৭), মোহাম্মদ শাহ (৫৮), নুরুল কবির (৩৫), মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু (৩০), মোহাম্মদ ইউনুচ (৪৮), ছৈয়দ হোসেন ওরফে ছৈয়দু (৫৬), মোহাম্মদ জামাল ওরফে জামাল মেম্বার (৫২), মো. হাসান আব্দুল্লাহ (৩৪), রেজাউল করিম ওরফে রেজাউল মেম্বার (৩৪), মো. আবু তাহের (৪১), রমজান আলী (২৮), ফরিদ আলম (৪২), মাহবুব আলম (৩৬), মোহাম্মদ আফছার (২৪), হাবিবুর রহমান ওরফে নুর হাবিব (২৪), শামসুল আলম ওরফে শামশু মেম্বার (৩২), মোহাম্মদ ইসমাঈল (৩৪), আব্দুল গনি (৩৩), মোহাম্মদ আলী (৩৭), জামাল হোসেন (৫৩), আব্দুল হামিদ (৩৫), নজরুল ইসলাম (৫২), রশিদ আহমেদ ওরফে রশিদ খুলু (৫৪), মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে দানু (৩৭), মোহাম্মদ সিরাজ (২৮), মোহাম্মদ আলম (৪৫), মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (৩৬), হোসেন আলী (২৭), মোহাম্মদ তৈয়ব (৪৬), নুরুল কবির মিঝি (৫৫), শাহ আজম (২৮), জাফর আহমেদ ওরফে জাফর (৪৩), জাফর আলম (৩৭), রুস্তম আলী ওরফে রুস্তম (৩৫), মোহাম্মদ হোছাইন (৩২), নুরুল আলম (৩৬), মোহাম্মদ হাশেম ওরফে আংকু (৩৮), শফি উল্লাহ (৩৮), আবু তৈয়ব (৩১), আলী নেওয়াজ (৩১), মো. জহুর আলম (৩০), মোহাম্মদ হুসাইন (৩৫), মোহাম্মদ সিদ্দিক (৩৪), রবিউল আলম (৩৬), মঞ্জুর আলী (৩৫), হামিদ হোসেন (৩৪), মোহাম্মদ আলম (৩৫), মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৫), মোহাম্মদ রাসেল (২৮), নুরুল আমিন (৩৫)৷ বোরহান উদ্দিন (৩৪), কামাল হোসেন (২৬), ইমান হোসেন (৩০), মোহাম্মদ হারুন (২০), শওকত আলম (৩০), হোছাইন আহম্মদ (২৫), মোহাম্মদ আইয়ুব (২৮), মো. আবু ছৈয়দ (২৫), মো. রহিম উল্লাহ (২৯), মোহাম্মদ রফিক (৩২), মোহাম্মদ সেলিম (৩২), নুর মোহাম্মদ (৪২), নুরুল বশর ওরফে কালাভাই (৪০), খালাত ভাই মং অং থেইন ওরফে মমচি (৪৮), মোহাম্মদ হেলাল (৩২), বদিউর রহমান ওরফে বদুরান (৪৭), আব্দুল করিম ওরফে করিম মাঝি (৪০), ছৈয়দ আলম (৪০), মোহাম্মদ হাছন (৩২), নুরুল আলম (২৬), আব্দুল কুদ্দুস (২৪), দিল মোহাম্মদ (৩৪), আলী আহম্মেদ (৩৫), মো. সাকের মিয়া ওরফে সাকের মাঝি (২৮), আলমগীর ফয়সাল ওরফে লিটন (৩০), জাহাঙ্গীর আলম (২৮), নুরুল আলম (৩৮), সামছুল আলম শামীম (৩৫), মোহাম্মদ ইউনুচ (২২), নুরুল আফসার ওরফে আফসার উদ্দিন (৪২), মোহাম্মদ শাহজাহান আনছারী (৩৮)।

মহেশখালীতে ১২ জলদস্যু বাহিনীর ৯৬ সদস্যের আত্মসমর্পণ
কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১২ জলদস্যু বাহিনীর ৯৬ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর শনিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অস্ত্র ও গুলি জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন। মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে কক্সবাজার জেলা পুলিশ এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্তি জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আবসার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আশায় আত্মসমর্পণকারী ৯৬ জলদস্যুকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!