কক্সবাজারের স্কুলে বেপরোয়া কোচিং বাণিজ্য

‘আমার ছেলে মোহাম্মদ আবিদুর রহমান আবির বতর্মান শহরের শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণীর বি-শাখার ছাত্র। ছেলের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক শফিকুল হক দুই মাসের কোচিং ফি ১৪০০ টাকা ও মাসিক ফি ৫০০ টাকার লম্বা একটি রসিদ হাতে ধরিয়ে দেন।’ এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরলেন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মুসা।

কোচিং না করেও টাকা দিতে হবে কেন- এমন প্রশ্নে ক্ষিপ্ত প্রধান শিক্ষক ছাত্র বহিস্কারের হুমকি দিয়ে ওই টাকা আদায় করে নেন বলে জানান তিনি।

সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলতি বছরের দ্বিতীয় মাস থেকে প্রথম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য কোচিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেউ কোচিং না করলেও তাকে ফি পরিশোধ করতে হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোচিংয়ের নামে অভিভাবকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরশহরে তারাবনিয়ার ছড়া শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউটটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ায় শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে এখানে। এই আগ্রহকে পুঁজি করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোচিংয়ের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সদর, উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে শহরে ২০০ টাকা এবং স্থানীয় পর্যায়ে ১৫০ টাকা করে রসিদের মাধ্যমে নেওয়া যাবে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান স্ববিবেচনায় এই হার কমাতে বা মওকুফ করতে পারবেন। একটি বিষয়ে মাসে সর্বনিম্ন ১২টি ক্লাস হতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবে। এই টাকা প্রতিষ্ঠান প্রধানের নিয়ন্ত্রণে একটি আলাদা তহবিলে জমা থাকবে। প্রতিষ্ঠানের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সহায়ক কর্মচারীর ব্যয় বাবদ ১০ শতাংশ টাকা কেটে রেখে বাকি টাকা অতিরিক্ত ক্লাসে নিয়োজিত শিক্ষকদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কোনোক্রমেই এ টাকা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণীত কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষক এই নীতিমালা লংঘন করে কোচিং বাণিজ্য করেন কিনা তা মনিটরিংয়ের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। থানা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং আঞ্চলিক পরিচালকরা এই মনিটরিং করবেন।

কোচিং বাণিজ্য নিয়ে কোন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বাদ-প্রতিবাদ করলে ওই শিক্ষার্থীকে শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউট থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দেয় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু শুধু কিছু লোকদেখানো কয়েকটি ক্লাস নিয়ে আমাদের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এবং টাকা পরিশোধ বিলম্ব হলে আমাদের গালমন্দ করেন।

কোচিং করানোর কথা স্বীকার করে শহীদ তিতুমীর ইনস্টিটিউটে প্রধান শিক্ষক শফিকুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারের নিয়ম মেনেই কোচিং করানো হচ্ছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!