কক্সবাজারের জাতীয় শিক্ষক দিবস পালিত : অবসরে গেলেও গ্রামীণ জনপদের শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে পেকুয়ার জসিম স্যার

মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া :
শিক্ষক জসিম উদ্দিন আহমদ। বয়স ৭০। চার সন্তান ও এক মেয়ের জনক।  ছেলে ও মেয়েরা সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত। উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। তার হাতে গড়া অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী দেশের মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত।

pic-02-chakaria-05-10-16

 

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নে জন্ম কৃতি শিক্ষক জসিম উদ্দিন। তিনি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে শিলখালী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। এই বিদ্যালয় থেকেই অবসরে যান তিনি। শিক্ষক যে পূজনীয় তার প্রতিটি নমুনা বহন করছেন বহুগুণের অধিকারী জসিম উদ্দিন প্রকাশ জসিম স্যার।

 

আজ বুধবার কক্সবাজারে বিভিন্ন অনুষ্টান মালার মধ্য দিয়ে পালিত হবে শিক্ষক দিবস। আর জাতীয় শিক্ষক দিবসকে ঘিরেই জেলার অজপাড়া গাঁ হিসেবে পরিচিত শিলখালীতে শিক্ষার আলো ছড়ানো অবসরে যাওয়া শিক্ষক জসিম উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে এই লেখা।
১৯৬৮ সালে শিলখালীতে প্রতিষ্ঠিত শিলখালী জুনিয়র হাই স্কুলটি জসিম উদ্দিনের হাত ধরে ১৯৭২ সালে হাই স্কুলে রুপ পায়। হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে ২০১২ সালে অবসরে যাওয়া পর্যন্ত টানা ৪০ বছর এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন জসিম উদ্দিন আহমেদ।

 

অবসরে গেলেও মহান পেশা শিক্ষার আলো জ্বালানোর রথ থেকে বিচ্যুৎ হতে পারেননি এখনো। প্রায় প্রতিদিনেই ছুটে যান বিদ্যালয়ে। খোঁজ খবর নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।
মানুষ গড়ার কারিগর জসিম উদ্দিন নিজ পরিবারও ছড়িয়েছেন আলো। তার চার ছেলে এক মেয়ে সবাই উচ্চ শিক্ষিত। প্রথম ছেলে মোহাম্মদ মেহেদী উর তাজের এমবিএ শেষ করে একটি প্রাইভেট ফার্মের কর্মকর্তা, মেজ ছেলে মোহাম্মদ ইয়াসির আরফাত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(এএসপি), সেজ ছেলে মোহাম্মদ আশরাফুল হক মিতুন এবি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, ছোট ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ পরীক্ষার্থী। উচ্চ শিক্ষিত একমাত্র মেয়ে নুশরাতের বিয়ে হয়েছে ব্যাংকেরই এক কর্মকর্তা সাথে।

 

pic-01-chakaria-05-10-16

শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী জসিম উদ্দিনের হাতে গড়া অসংখ্য ছাত্র এখন দেশ উন্নয়নে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। তারই ছাত্র পেকুয়ার সালাহউদ্দিন আহমদ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বেশ ক’জন ছাত্র সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, হাকিম আদালতসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দপ্তরে উচ্চ পদে আসীন রয়েছেন।

 

আজ বুধবার সকালে মুঠোফোনে কথা হয় প্রবীণ শিক্ষক জসিম উদ্দিন আহমেদের সাথে। তাকে নিয়ে সংবাদ পত্রে লেখা হবে শুনেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, অবসরের পর হলেও আমাকে নিয়ে লেখার আগ্রহ দেখানোয় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ।

 

শিক্ষকতার শুরু ও মাঝামাঝি সময়ে লেখালেখি হলে শিলখালীসহ তৎকালিন বৃহত্তর চকরিয়া শিক্ষা ক্ষেত্রে দেশের মডেল উপজেলায় স্থান পেত। অঢেল আয়ের উৎস থাকা সত্বেও মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী স্বল্পতার কারণেই এই এলাকা পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষায়। বর্তমান সরকার যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা দেয়ায় গ্রামীণ জনপদেও বেড়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাথে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী বাড়লেও শিক্ষার মান তেমন বাড়েনি।

 

তিনি আরো বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিটি পরিবারকেই শিক্ষায় সচেতন হতে হবে। প্রতিটি মানুষের মনে জাগাতে হবে শিক্ষার আলো। এক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে বিষয় ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষক না পাওয়ায়। সরকারের চালু করা নিবন্ধন পদ্বতির মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষক সমবন্ঠন করে গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলোতে চাকুরী করা বাধ্যতামূলক করলে শিক্ষার মানের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

 

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!