কক্সবাজারের ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের অবৈধ স্থাপনা সরানোই যাচ্ছে না

নোটিশ দিয়েই খালাস উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

নোটিশ দেওয়ার ১০ মাস পার হলেও এখনও উচ্ছেদ হয়নি কক্সবাজার শহরের নকশা বহির্ভূত স্থাপনা। ‘ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট’ কর্তৃপক্ষকে ২০২১ সালে সাত কারণ দেখিয়ে দুবার নোটিশ দিলেও এখনও চালানো হয়নি উচ্ছেদ অভিযান। অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে গাড়ির বাস কাউন্টার, দুটি স্টিলের সিঁড়ি, রেস্টুরেন্ট, অফিস, ড্রাইভওয়েতে দোকানসহ অনেক স্থাপনা। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ফলে গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা নেই বললেই চলে। অথচ নকশায় দেখানো হয়েছিল গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট হচ্ছে প্রতিদিন। এতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা।

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন নোটিশদাতার বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি বাস কাউন্টার ও রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে না বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, পর্যটক ও স্থানীয়দের সুবিধার কথা ভেবে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের নকশা বহির্ভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক) গত বছরের ২১ অক্টোবর অথরাইজড অফিসার স্বাক্ষরিত ‘অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিশ’ দেয় রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাজী দেলোয়ার হোসেন ও মঞ্জুর আলমকে।

নোটিশে কউকের অথরাইজড অফিসার সাতটি বিষয় উল্লেখ করেন। যা হলো ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের অনুমতিপত্রে বাণিজ্যিক ও নকশায় আবাসিক উল্লেখ আছে যা সাংঘর্ষিক, ড্রাইভারদের জন্য ওয়েটিং রুম ও টয়লেট নকশায় দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই, বাইরের দিকে দুটি স্টিলের সিঁড়ি থাকলেও নকশায় এর কোনো অস্তিত্ব নেই, সিঁড়ি ও লিফটে অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছে, নকশায় যেখানে রেস্তোরাঁ এবং শপ দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে নেই, তাছাড়া রির্সোটের নিচতলায় দুটি অফিস থাকলেও নকশায় এর কোনো অস্তিত্ব নেই, নকশায় যেখানে ড্রাইভওয়ে ও পার্কিং দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে রয়েছে দোকান।

এরপর গত বছরের ৪ নভেম্বর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একই অথরাইজড অফিসার রিসাদ উন নবী স্বাক্ষরিত একটি চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয় ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে। সেই নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছিল, সাতদিনের মধ্যে নকশায় ব্যতিক্রম অংশ ভেঙে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় কউকের পক্ষ থেকে তা অপসারণ করা হবে। এরপর গত বছরের ১৫ নভেম্বর রিসোর্টের এমডি হাজী দেলোয়ার হোসেন নোটিশের জবাব দেন। সেখানে তিনি কউকের নকশা বহির্ভূত সকল স্থাপনা ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সহযোগিতার আশ্বাসের কথা বলেন।

কিন্তু ১০ মাস পার হলেও রহস্যজনক কারণে সেখানে উচ্ছেদের আঁচ লাগেনি। বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে হোটেল ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের নকশা বহির্ভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা। এরমধ্যে আরও একটি নতুন রেস্টুরেন্ট তৈরির কাজ চলছে সেখানে।

আরও জানা গেছে, দুবার নোটিশ দেওয়ার পর সেখানে কউকের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন কয়েকবার পরিদর্শনে যান। সেখানে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারী ও ব্যবহারকারীদের সঙ্গে তার মোটা অংকের বাণিজ্য হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

স্থানীয়দের দাবি, যদি নোটিশদাতারা ম্যানেজ না হয়, তাহলে মালিকপক্ষ ও রিসোর্টের এমডি হাজী দেলোয়ার হোসেন উচ্ছেদের পক্ষে থাকার পরও কেন এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হচ্ছে না। গ্রিন লাইন বাস কাউন্টার ও হোটেল পউষী’র মালিকের কাছ থেকে কউকের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। এজন্য চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়ার পরও কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি কউক।

অভিযোগের ব্যাপারে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী অথরাইজড অফিসার নাছির উদ্দিন বলেন, ‘নোটিশ দেওয়া হলেও এটি তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কী সম্পর্ক— জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন’ বলে এড়িয়ে যান।

তবে এক পক্ষের কাছে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর প্রমাণ কেউই দিতে পারবে না।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার মো. রিসাদ উন নবী বলেন, ‘আমি অথরাইজড অফিসার হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি। যে কারণে ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের দুজনকে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলার নোটিশ দিয়েছি। তবে উচ্ছেদ কিংবা মোবাইল কোর্ট করার এখতিয়ার আমার নেই। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচিব স্যার ও চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে আলাপ করব।’

ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালের ২১ অক্টোবর এবং ৪ নভেম্বর কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার রিসাদ উন নবী স্বাক্ষরিত দুটি নোটিশ দেওয়া হয় আমাকে। প্রথমটি ‘অনুমোদিত নকশার বিচ্যুতি সম্পর্কিত কারণ দর্শানোর নোটিশ’ এবং দ্বিতীয়টি উচ্ছেদের জন্য চূড়ান্ত নোটিশ। আমি নোটিশ দুটির জবাব দিয়েছি। পাশাপাশি উচ্ছেদকে স্বাগতম জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও কেন তারা উচ্ছেদ করছে না, তা আমি অবগত নই। আমি সবসময় আইনের পক্ষে এবং অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিরুদ্ধে।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব আবু জাফর রাশেদ জানান, ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টটি কউক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে থেকে রয়েছে। কউক’র যাত্রা শুরুর পর অভিযোগের ভিত্তিতে সেই রিসোর্ট কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে মালিকানা নিয়ে জটিলতা থাকার কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে নতুন করে যে সকল স্থাপনা হয়েছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মো. নুরুল আবছার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। ওই বিষয় নিয়ে যদি কোনো কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়েছে—এমন প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!