ককবরক ভাষায় কাজ করে প্রথম মাতৃভাষা পদক পাচ্ছেন খাগড়াছড়ির মথুরা ত্রিপুরা

জাতীয় পর্যায়ে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক’ পাচ্ছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ির মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। এই পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই পুরস্কার পাচ্ছেন উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ এবং বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস।

সরকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর এ বছরই প্রথম এ সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা জাতীয় পদক’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্তর্জাতিক পদক’-এ দুই ক্যাটাগরিতে পদক দেওয়া হবে দুই বছর পর পর। নীতিমালা অনুযায়ী, পদক হিসেবে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, সম্মাননাপত্র এবং চার লাখ টাকা বা পাঁচ হাজার ডলার দেওয়া হবে।

২১ ফেব্রুয়ারি বিকালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক দেবেন।

জাতীয় পর্যায়ে মাতৃভাষার সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও বিকাশে অবদানের জন্য ২০২১ সালে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ পুরস্কার পাচ্ছেন। নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম নজরুল অধ্যাপক এবং নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক। ৮৭ বছর বয়সী এই ভাষাবিজ্ঞানী ও লেখক ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সেই সময়ের দুর্লভ আলোকচিত্রও ধারণ করেছেন তিনি। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রথম গ্রন্থ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থটিসহ প্রায় ৩০টি বই তার হাত দিয়ে এসেছে।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের সাবেক এই উপাচার্য এক সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক করে নেয়। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এর আগে একুশে পুরস্কার, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকের জন্য মনোনীত আরেক বাংলাদেশি মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ ও এসব ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম প্রণয়নে কাজ করেছেন। খাগড়াছড়ির জাবারাং কল্যাণ সমিতির এই নির্বাহী পরিচালক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার চিত্র, মাতৃভাষায় শিক্ষা পরিস্থিতি, মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

ভারতের ত্রিপুরা ও সংলগ্ন বাংলাদেশে বসবাসরত ত্রিপুরাদের মাতৃভাষা ‘ককবরক’-এর উন্নয়ন ও প্রসারে কবি ও প্রাবন্ধিক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার অবদান উল্লেখযোগ্য। ‘ককবরক’ ভাষায় একাধিক বইও লিখেছেন তিনি। ২০০৮ সালে ‘ককবরক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘মাতৃভাষা পদক’ পাচ্ছেন উজবেকিস্তানের গবেষক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ। একইসঙ্গে এই সম্মাননা উঠছে লাতিন আমেরিকার আদি ভাষাগুলো নিয়ে কাজ করা বলিভিয়ার অনলাইন উদ্যোগ অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াসের হাতে।

উজবেকিস্তানের নাগরিক ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ তার মাতৃভাষার গবেষণায় অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। উজবেক ভাষার চর্চার প্রসার, সংরক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিকাশে তার ভূমিকা অগ্রগণ্য। ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়গুলো ছাড়াও আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটগুলো তার কাজে গুরুত্ব পেয়েছে। বিশ্বে মাতৃভাষা হিসেবে উজবেক ভাষার অবস্থান সংহত করতে বিভিন্ন প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন ইসমাইলভ গুলম মিরজায়েভিচ।

লাতিন আমেরিকার স্থানীয় ভাষাগুলোকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে বলিভিয়ার অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াস। এ সংস্থার কোনো অফিস নেই। এ উদ্যোগে জড়িত সবাই কাজ করেন ভার্চুয়ালি।

২০১৪ সালে মেক্সিকোতে ইনডিজেনাস ল্যাঙ্গুয়েজ ডিজিটাল অ্যাক্টিভিস্টসদের প্রথম সম্মেলনের পর অ্যাক্টিভিজমো লেংকুয়াসের যাত্রা শুরু হয়। আমেনিকার লাতিন ভাষাভাষী অঞ্চলের আদিবাসীদের মাতৃভাষা এবং পুরনো ভাষাগুলোর সংরক্ষণ, প্রসার ও গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এ সংস্থা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!