ওয়েল ফুড মধুবন মিঠাইসহ চট্টগ্রামের আট প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিম্নমানের!

এসব খাদ্য গ্রহণে ক্যান্সার হতে পারে বলছেন চিকিৎসকরা

নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের আটটি বহুল পরিচিত প্রতিষ্ঠান। পরীক্ষায় নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হওয়ায় সম্প্রতি যে ৫২ খাদ্যপণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট, সেখানে চট্টগ্রামের আটটি প্রতিষ্ঠানের পণ্য রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আছেন চট্টগ্রামের সনামধন্য ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, `নিম্নমানের এসব পণ্য খাবার হিসেবে গ্রহণ করলে মানুষের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।’ খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও মান তদারককারী সংস্থাসমূহ বলছে, ‘এসব পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহার করা না হলে তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাও্য়া তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামে নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যাক্ষ আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন ‘ওয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানি’। এই প্রতিষ্ঠানটি ‘ওয়েল ফুড’ ব্রান্ডের লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। ষোলশহরের আতুরারডিপো জঙ্গলপাড়ায় রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের কারখানা।
নিম্নমানের ‘মধুবন’ ব্রান্ডের লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন ও বাজারজাত করছে পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুরের হাটহাজারী রোডের ‘মধুবন ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড’।

নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী চট্টগ্রামের অন্য প্রতিষ্ঠান ও ব্রান্ডগুলো হলো এসএস কনজ্যুমার প্রোডাক্টসের ‘পিওর হাটহাজারী’ ব্রান্ডের মরিচের গুড়া; ফিরিঙ্গিবাজার ইয়াকুব নগরের মিষ্টিমেলা ফুড প্রোডাক্টস এর ‘মিষ্টিমেলা’ ব্রান্ডের লাচ্ছা সেমাই; নাসিরাবাদের বায়তুল আমান মার্কেটের মিঠাই সুইটস অ্যান্ড বেক এর ‘মিঠাই’ ব্রান্ডের লাচ্ছা সেমাই; সীতাকুন্ডের বাঁশবাড়িয়ার কেআর ফু ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ‘কিং’ ব্রান্ডের ময়দা; হালিশহরের ঈদগাহ ডিটি রোডের রূপসা ফুড প্রোডাক্টস এর ‘রূপসা’ ব্রান্ডের ফারমেন্টেড মিল্ক এবং আসাদগঞ্জের ইমতিয়াজ ব্রেড অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস এর ‘মেহেদী ব্রান্ডের বিস্কুট’।

এ সব নিম্নমানের পণ্য খাদ্য হিসেবে দীর্ঘ মেয়াদে গ্রহণ করলে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে বলে জানান চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মো.আজিজুর রহামন সিদ্দিকী। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএসটিআই কর্তৃক পরীক্ষায় নিম্নমানের প্রমাণিত হওয়া এ সব খাদ্য গ্রহণ করলে মানুষের পেটের পীড়া, গ্যাস্ট্রিক, ডায়রিয়া, লিভার, কিডনি, আলসারজনিত রোগ হতে পারে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ মুহুর্তে যদি আমরা ওই সব পণ্য ধ্বংস করি, তাহলে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) এ সব প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেওয়া হবে। তিনদিনের মধ্যে পরীক্ষায় অকৃতকার্য পণ্যসমূহকে বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হবে। তিনদিন পার হওয়ার পরে কোথাও যদি ওই পণ্য পাওয়া যায় তবে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।’

উল্লেখ্য, পরীক্ষায় নিম্নমানের প্রমাণিত হওয়ায় গত রোববার (১২ মে) ৫২ পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একটি রিট আবেদনের জবাবে রোববার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এই নির্দেশ দিয়েছেন। রমজান মাস শুরুর আগে খোলা বাজার থেকে ৪০৬ পণ্যের নমুনা ক্রয় করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই)। এরপর সে সব পণ্য বিএসটিআই-এর ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এরমধ্যে ৫২ পণ্য ল্যাব পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে। এদিকে তিনদিনের মধ্যে বাজার থেকে এ সব পণ্য প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৫ মে) এ নির্দেশ দেয়া হয়।

এমএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!